আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল: অনলাইন মিডিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠীর শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেনÑ ফেসবুকে উস্কানিমূলক ও জঙ্গিবাদী পোস্ট-কমেন্ট কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। গুটিকয়েক লোকের গ্রেফতারের ফলাফল এটা। অর্থাৎ গ্রেফতারকৃত কয়েকজনের অধীনে থাকা সাইবার গ্রুপ এখন নিষ্ক্রিয়। তবে জামায়াতের কাফের শাখাসহ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। লাভের আশা না করে জঙ্গি তৎপরতা ও অপপ্রচারে বিনিয়োগকারী হিসেবে জামায়াত শিবিরের নাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। মওদুদী, হাসান আল বান্না ও সৈয়দ কুতুব নির্ধারিত কৌশলে গড়ে ওঠা এই সংগঠনগুলোর দুটি চেহারা রয়েছে।
এক. তৃণমূলের কর্মী, সদস্য ও সমর্থক। স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ চাকরিজীবী কর্মী-সমর্থকরা জামায়াতের ফান্ডে প্রতি মাসে টাকা দেয়। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা এয়ানত হিসেবে আয়ের ১৫ শতাংশ দলীয় তহবিলে দান করে। এই দাতাগোষ্ঠীর ধারণা তারা আখেরাতের জন্য বড় কোনো কাজ করেছে। এমন মনে করা যে বিদাত বা জাহান্নামের পথ তাও ভুলে যায়। এই টাকা যে রাসুল (সা.) এর সমান্তরালে নিজেকে দাঁড় করানো মওদুদীর মতবাদ প্রতিষ্ঠায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেই বোধও তাদের মৃত্যু পর্যন্ত সাধারণত হয় না।
দুই. সংগৃহীত টাকার ভোক্তাগোষ্ঠী। জামায়াত শিবিরের শীর্ষ নেতাদের জন্য রাজনীতি হচ্ছে পেশা। কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনভুক্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য নেই। দলীয়ভাবে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে নেতারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, সন্তানদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে পাঠায়। উল্লেখ্য, বিলাসী জীবন কাটানো নেতাদের সন্তানদের কেউই বলতে গেলে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হয় না। এর কারণ সংশ্লিষ্ট নেতা নিজে বুঝতে পারে যে সে বিকৃত ও বিভ্রান্তির পথে ছিল। তাই নীরবে নিজেকে ও তার নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই পথ থেকে সরিয়ে নেয়।
দলীয়ভাবে জামায়াতের আয় মাসে একশ কোটি টাকা বলে শোনা যায়। এ টাকার একটি অংশ যায় পাকিস্তানে মূল দলের ফান্ডেও। এই টাকাই জামায়াত শিবিরের মূল শক্তি। এর মাধ্যমেই দেশে বিদেশে তাদের অপপ্রচারের মিশন পরিচালিত হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তা ও কৌশলের সঙ্গে তারা তৎপরতা চালায়। উদাহরণ স্বরূপ: আহমদ শাওকী আফিফি হচ্ছে রাজাকারদের জীবনীসহ আরবিতে অনূদিত সকল অপপ্রচারের মূল হোতা। কিন্তু তার নাম বেশি কেউ জানে না। তার তেমন কোনো লেখাও স্বনামে প্রচার হয় না। কিন্তু প্রোফাইলে গেলে দেখবেন এক্টিভিটি না থাকা আইডির ফলোয়ার ৩৫ হাজার+। আবার জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত অগণিত ফেসবুক পেইজ রয়েছে যা মাসিক ভাতা দিয়ে চালানো হয়। ২/৩ বছর আগের তথ্য অনুযায়ী সাধারণ একটি পেইজ চালানোর জন্য জামায়াত মাসে ৮ হাজার টাকা দেয়। কোটা নেতা রাশেদ ও ফারুক জামায়াত সমর্থিত ‘ইকামতে দ্বীন’ নামে একটি পেইজ চালাতো বলেই তাদের বিরোধিতা শুরু করেছিলাম। শিবির মোবারকের মাধ্যমে (জামায়াতে ইসলামীর কাফের শাখার আমীর) নিয়োগপ্রাপ্ত পিনকির কিবলা পরিবর্তনের হেতু এই টাকাই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভজনক বিনিয়োগের উদাহরণ হচ্ছে রকমারি বা গার্ডিয়ান প্রকাশনী। আর অলাভজনক বিনিয়োগের উদাহরণ হচ্ছে, মাদ্রাসায় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্রদের মোবাইল কিনে দেয়। কিন্তু অলাভজনক বিনিয়োগেরও বাণিজ্যিক মূল্য রয়েছে। এসব ছাত্ররা বিপণন বা প্রচার প্রসারে ভূমিকা রাখে এবং ইউটিউব ভিউয়ার হিসেবে বা জঙ্গিবাদী বইয়ের ক্রেতা হিসেবে আয়ের উৎস হয়। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ সংশ্লিষ্ট নেতা বা ব্যক্তির অবস্থান তৈরি করে বা নির্দিষ্ট কোনো ইস্যু তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যা টাকা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
অনলাইনে আমরা বিপ্লব ও জেহাদের যে গণজোয়ার দেখি তার প্রকৃত প্রতিফলন মাঠপর্যায়ে দেখা না গেলেও অনলাইনের তৎপরতা যে অনেকাংশে জনমত প্রভাবিত করতে পারে এটা স্বীকার করতেই হবে। গত কয়েক বছরে ওয়াজ এবং অনলাইনের মাধ্যমে যেভাবে মানুষের মন কলুষিত করা হয়েছে তা পরিশুদ্ধ করা সম্ভব কিনা জানি না! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :