শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে ৬০.৭ শতাংশ ◈ তীব্র তাপদাহে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: বিএনপি ◈ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ◈ বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে: ওবায়দুল কাদের ◈ উপজেলা নির্বাচনে হার্ডলাইনে বিএনপি, ৭৩ নেতা বহিষ্কার ◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন 

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০২১, ০২:২৬ রাত
আপডেট : ২১ মে, ২০২১, ০২:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারের ব্যাংক ঋণে লাগাম

জনকণ্ঠ: ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেয় সরকার। কিন্তু এবার ধার না করে উল্টো আগের ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতি, সঞ্চয়পত্র থেকে অস্বাভাবিক ঋণ এবং রাজস্ব আয়ে গতি আসায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পরও বেশ কিছু অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকছে। ঋণের বোঝা লাঘব করতে সেই অর্থ দিয়ে সরকার আগের ঋণ শোধ করছে বলে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তারপরও ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ রেকর্ড ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা নিয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণের অঙ্ক ছিল ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি। ফলে সরকারের নিট ঋণগ্রহণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণস্থিতি ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত ১০ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা কমেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রচুর ঋণ সহায়তা দেয়ায় সরকারকে এখন আর ব্যাংক থেকে তেমন ঋণ নিতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) বাস্তবায়ন খুবই কম। অন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছে সরকার। তাই ব্যয় কম হচ্ছে। অন্যদিকে রাজস্ব আদায় খুব বেশি ভাল না হলেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেই টাকা ধার হিসেবে নিয়ে খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। ‘তাই সব মিলিয়ে সরকারকে এখন আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে না। উল্টো অন্যান্য উৎস থেকে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা খরচ করেও বেঁচে যাচ্ছে। সেই টাকাই শোধ করছে সরকার।’

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূলত দুটি কারণে এবার সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে না। প্রথমত, মেগা প্রকল্পের বাইরে আপাতত তেমন কোন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক কমে যাওয়ায় সবাই এখন সঞ্চয়পত্র কিনছে। বিক্রি অস্বাভাবিক বাড়ছে। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরও অনেক টাকা কোষাগারে থেকে যাচ্ছে। সে কারণে আর ব্যাংকের দারস্থ হতে হচ্ছে না সরকারকে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকার যে বাজেট দেয় বাস্তবের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। ব্যয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার অর্ধেকও হয়নি। আবার কম খরচে বিদেশী ঋণ পাওয়া গেলেও খরচের ক্ষেত্রে বেশি জবাবদিহিতা থাকায় সরকারী কর্মকর্তারা তা খরচ করতে চান না। সব মিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে সার্বিক ব্যয় কম।’

বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়ে থাকে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে, নিট হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) মাত্র ৪২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, এই ৯ মাসে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু অর্থবছরের আট মাসেই অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারির সময়েই তার থেকে প্রায় দেড় গুণ ২৯ হাজার ৩১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে ফেলেছে সরকার। অর্থবছরের বাকি চার মাসে (মার্চ-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা নিয়ে চিন্তিত আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সবচেয়ে বেশি। এটি বিক্রি বেড়ে গেলে সরকারকে গ্রাহকদের বেশি বেশি সুদ দিতে হয়। এতে বাজেট ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়ে।’

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ৯ মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। চলতি ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। কিন্তু প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিয়েছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ওই অঙ্ক ছিল এ যাবতকালে সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া সরকারের সবচেয়ে বেশি ঋণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। তার মধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলার ছিল শেষের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন)। সেই ধারাবাহিকতা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও অব্যাহত আছে। এই অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়েরে চেয়ে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়