মহিবুল হাসান চৌধুরী: একজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সেটি অবশ্যই তদন্ত হবে। নিঃসন্দেহে গণমাধ্যম রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী, দেশের সাধারণ মানুষ সকলেরই সহায়ক। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এটিও মনে রাখা দরকার, কিছু কিছু মিডিয়া হাউজের কাছে আমরা যে ধরনের নিরপেক্ষতা আশা করি, সেটি আমরা দেখি না। এ দেশেই আমরা দেখেছি বড় কর্পোরেশনগুলোর অনেক কর্ম-অপকর্ম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। কারণ তাদের বিজ্ঞাপন, ব্যবসায়িক স্বার্থ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আবার অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জনস্বার্থ রক্ষিত হয়েছে, সাহসী সাংবাদিকতার পরিচয় আমরা দেখেছি। আমরা প্রায়শই দেখি বড় হাউজের দাপট, যেমন খুশি সত্য-মিথ্যা লিখলেও প্রতিকার নেই কোনো, মালিকের স্বার্থে আঘাত এলেই অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার কোনো ভিত্তি নেই। আবার অনেক সাংবাদিক সত্য প্রকাশ করে হয়রানির শিকার হয়েছেন, এটিও সত্য। এই বিশাল ফারাক নিরসনে, ভোগান্তি নিরসনে, তথ্য পাওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগুলোকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে একটি তথ্য কমিশন আছে, সরকারের দপ্তরে তথ্য কর্মকর্তা আছেন। এই তথ্য পাওয়ার অধিকার সাংবাদিকসহ সকলের আছে। আমরা কয়জন সেই অধিকার মেনে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তথ্য নিই? আমি আইনজীবী হিসেবে একবার কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। যে তথ্য আমি কোনো সাংবাদিক মারফত সহজেই পেতাম, কিন্তু বিদেশি মক্কেল, সাংবাদিক মারফত এই অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি সমর্থন করলেন না, দুদকের ডিজিকে অনেক বুঝিয়ে আইনের ব্যখ্যা দিয়ে সেই তথ্য আমি লিখিত নিয়েছিলাম। আমাদের গণমাধ্যমগুলোর উচিত এই তথ্য কমিশন এবং এই আইনের আরও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে তথ্য পাওয়ার পরে, সেটি বিশ্লেষণ করে সংবাদ প্রচার করেও জনস্বার্থ রক্ষা করা যায়। আমাদের দেশে সরকারের গোপন দলিল দস্তাবেজের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে যেভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের অবাধ যাতায়াত আছে, আমার মনে হয় না প্রতিবেশী কোনো দেশেও সেটি আছে। এই ঘটনায় ঢালাওভাবে কে দোষী, কে নির্দোষ, এটি নিয়ে পক্ষভুক্ত হওয়ার চাইতে প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে কেন তথ্য চাওয়া হলোনা, সেটি নিয়েও আমাদের প্রশ্ন করা উচিত, আর আমরা এটিও জানি একটি পত্রিকা প্রতিদিন এই সরকারের কাজগুলো নিয়ে একটি করে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে, সেই এজেন্ডাও কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। রাজনীতিবিদদের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি গণমাধ্যম ও সংবাদ কর্মীগণ, তাদের প্রকাশনা এবং অনুসন্ধান সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। তাই সংবাদমাধ্যমকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন, আর এর জন্য শুধুই চমকপ্রদ সংবাদের চাইতে বস্তুনিষ্ঠতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্বচ্ছতার জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বিকল্প নেই। সেই স্বাধীনতা শুধু সরকার বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে নয়, বড় বড় প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপের বিষয়েও সত্য। আমরা কিন্তু দেখি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক শ্রেণির প্রভাবশালী ধনকুবেররা এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তখনো স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের আলোচনা সামনে আনা উচিত। স্বাধীনতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা, নৈতিকতাহীন প্রভাবশালীর মালিকানাধীন থাকলেও হয় না। তাই অবশ্যই আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত প্রত্যাশা করি। ফেসবুক থেকে