রহিদুল খান:[২] চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা রোগী শনাক্তের জন্য দু’টি ল্যাব প্রস্তুত করা হয়েছে। সরাসরি স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ল্যাব দু’টিতে করোনা সংক্রমিত সন্দেহ ভাজনদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
[৩] যশোর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ল্যাবটি সোমবার উদ্বোধন করা হয়েছে। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ল্যাবটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে মঙ্গলবার । দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
[৪] দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে যশোর থেকে সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ও খুলনা মেডিকেল কলেজসহ সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হতো। এতে রিপোর্ট পেতে বেশ সময় লাগতো। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল যশোরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাপক তৎপর হয় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত আনার জন্য।
[৫] এমনকী যশোর মেডিকেল কলেজে ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়। কিন্তু তাতে কাজ হয় না। এক পর্যায়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ আগ্রহ দেখায় করোনা রোগী শনাক্ত রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করার।
[৬] সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে যবিপ্রবি’র জিনোম সেন্টারে করোনা সংক্রমিত সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়। এখনো কাজ অব্যাহত রেখেছে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।
[৭] ইতিমধ্যে যবিপ্রবি, খুলনা মেডিকেল কলেজ, আইইডিসিআরসহ দেশের বিভিন্ন ল্যাব থেকে যশোর জেলা থেকে সংগৃহিত ৩৬ হাজার তিনশ’ ৫৬ জনের করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার পাঁচশ’ ৫২ জনের। সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার দুশ’ তিনজন।
[৮] করোনায় প্রাণ নিয়েছে ৭৬ জনের। যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিনিয়ত দেনদরবার করে আসছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের। অবশেষে সেটি বাস্তবায়ন হয়েছে। যশোর বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবে যক্ষা রোগ নির্ণয়ের জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
[৯] তিনি জানান, ওই মেশিন দিয়েই করোনা টেস্ট করা সম্ভব। অটোমেটিক রিয়েল টাইম পরিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (এআরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতে টেস্টটি করা হবে। প্রয়োজনীয় জনবল পদায়ন, পরীক্ষার জন্য রি-এজেন্ট ও কিট সংগ্রহ করে প্রস্তুত করা হয় ল্যাব দু’টি। সোমবার যশোর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে করোনা টেস্টের ল্যাব উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
[১০] সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীনসহ উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার পলাশ কুমার দাস, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার রেহনেওয়াজ রনি ও জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শিশির কান্তি পাল।
[১১] সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, যবিপ্রবি’র জিনোম সেন্টারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে জেলা পর্যায়ে একটি ও উপজেলা পর্যায়ে একটি ল্যাবে করোনা রোগী শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। দু’টি ল্যাবে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
[১২] যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব দু’টি খোলা রাখা হবে। দু’টি মেশিন প্রতি ঘণ্টায় আটটি নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন করে ফলাফল দিতে সক্ষম।উদ্বোধনী দিনে যশোর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ল্যাবে চারটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রত্যেকটির ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন