রহিদুল খান : বাজারে চাহিদা, দাম দুটিই বেশি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপসিকাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষি। কৃষি উদ্যোক্তারা বলছেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চাষটি ছড়িয়ে দিতে পারলেই বিদেশী জাতের এ সবজির আমদানি নির্ভরতা কমবে। ক্যাপসিকাম মূলত একটি উন্নত জাতের সবজি। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে রয়েছে এর জনপ্রিয়তা।
আমাদের দেশে এর আগে যত ক্যাপসিকাম বাজারে দেখা যেতো তা মূলত পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি করা। দেশীয় সবজি না হলেও এখন এ সবজির চাষ করা হচ্ছে যশোরে। জেলার ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, চৌগাছাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়া পাড়া গ্রামের কৃষক মনজুর আলম ক্যাপসিকাম চাষ করে সাড়া ফেলেছেন এলাকায়।
পটুয়া পাড়ার কৃষক মনজুর আলম মুলত একজন ফুল চাষি। কিন্তু পরপর কয়েক বছর ফুলের বাজারে ধস নামায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপসিক্যাম চাষের। ভারতে গিয়ে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ দেখে আসেন বছর দুয়েক আগে। এরপর থেকেই তিনি বাংলাদেশের মাটিতে ক্যাপসিকাম চাষের আগ্রহ দেখান। তার আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নেয় বিএডিসি। বিএডিসির পক্ষ থেকে তার এক বিঘা জমিতে আধুনিক শেড করে দেয়া হয়।
কৃষক মনজুর আলম জানান, প্রথম দিকে তিনি ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ২০০ টাকার বেশি করে বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার বাজার মন্দা। তারপরও ভালো মানের বীজ দিয়ে তিনি চারা তৈরি করায় এখনও এক মাস ক্ষেত থেকে ক্যাপসিকাম তুলতে পারবেন। ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান। ক্ষেতে বর্তমান যা আছে তা বিক্রি করে আরও লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এখানকার উৎপাদিত ক্যাপসিকাম যশোর শহর ছাড়াও রাজধানীর বাজারে পাঠানো হয়। পরে তা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ক্রয় করা হয়। বিশেষ করে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে এর ব্যবহার বেশি। বাজারে প্রতিকেজি ক্যাপসিকাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়। মনজুর আলমের শেডের ভেতর ঢুকলে মনে হবে ক্ষেতে কাঁচা-পাকা নানা রঙের টমেটো। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলে বোঝা যাবে, এটা টমেটো নয় ক্যাপসিক্যাম। ক্ষেতে বর্তমান রয়েছে লাল, হলুদ আর সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাষিরা এখানে আসছেন ক্যাপসিকামের চারা কিনতে চাষিরা জানান, ক্যাপসিকামের বীজ বপন করার এক মাস পর চারা তৈরি হয়।
চারা উপযুক্ত হওয়ার পর জমি তৈরি করতে হয়। চারা রোপণের আগে পলিথিন দিয়ে বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে গাছের চারা বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হয়। কয়েক মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় এ গাছ থেকে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি ফলের ওজনও ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো। আগামীতে কয়েকগুণ বাড়িয়ে ক্যাপসিকামের চাষ করবেন বলে জানান ঝিকরগাছার পানিসারার ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে এটি খুবই ইতিবাচক দিক। এটি লাভজনক চাষ। চাহিদাও রয়েছে বাজারে। বিশেষ করে ঝিকরগাছার পলিশেডে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এর চাষ হচ্ছে। বিএডিসির পক্ষ থেকে এসব আধুনিক শেড তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ঝিকরগাছায় নয়, জেলার অন্যান্য এলাকাতেও ক্যাপসিকামের চাষ করছেন অনেক কৃষক। লাভজনক হওয়ায় এ চাষে কৃষককে আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।