সুজন কৈরী : [২] চাকরির আশায় ময়মনসিংহের বাসা থেকে বেরিয়ে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় একজন কিশোরী। ভীত সন্ত্রস্ত কিশোরীর কারো কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতাও ছিল না। কিন্তু পথে মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পারেন একজন পথচারী। পরে তিনি ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত বাংলাদেশ পুলিশ নামক অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে বার্তা পাঠান।
[৩] বার্তা পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে এবং ঘটনায় জড়িত প্রধান অভিযুক্তসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ছোটবেলায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা মারা যান। বাবা আবার বিয়ে আলাদ থাকেন। কিশোরী থাকতো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় তার দাদির সঙ্গে। দাদিকে নিয়ে অনেক কষ্টে চলে সংসার। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে রায়পুরে থাকা এক বান্ধবী কিশোরীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা জানায়। সে অনুযায়ী চাকরির খোঁজে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে কিশোরীটি।
[৪] কিন্তু করোনা কারণে যাতায়াতের ব্যবস্থা ভাল না থাকায় ভেঙে ভেঙে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত পৌঁছায় ওই কিশোরী। তখন সন্ধ্যা। একাকী কি করবে, কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছিলো না। রেল স্টেশনে একা দাঁড়িয়ে খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায় অথবা নিরাপদে রাতটা পার করার কোনও আশ্রয়। এ সময় স্টেশনের পাশে এক লেগুনা চালক এগিয়ে আসে তার দিকে। তাকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে লেগুনায় তোলে। পথে চালকের সঙ্গে আরও কয়েকজন যুবক যোগ দেয়। তারা মেয়েটিকে নিয়ে হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে চলে যায়। সেখানে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে হেঁচড়ে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যায়। তারা কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। ভোরের দিকে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয় তারা। অসুস্থ শরীরে মেয়েটিও চলে যায়।
[৫] পথে কিশোরীর কাছ থেকে এমন তথ্য জানকে পারেন কোনও এক ভদ্রলোক। ওই সময় মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিলো। কারও কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতা ছিল না তার। কিশোরীর ধারনা, ধর্ষকরা আবারও তাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্যাতন করবে। মেয়েটিকে দীর্ঘক্ষণ অনুসরণ করতে পারেননি ভদ্রলোক। ঘটনাটি গত ৬ মে হলেও ১২ মে ওই ভদ্রলোক বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে বার্তা পাঠান।
[৬] বার্তাটি পাওয়ার পর তা কালিহাতি থানার ওসি সওগাতুল আলমকে পাঠিয়ে দ্রæত তদন্ত করে মেয়েটি ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। ওসি কালিহাতির তৎপরতায় ইন্সপেক্টর তদন্ত রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম বিষয়টির তদন্তে নামে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার খুঁজে পায় তারা।
[৭] তবে ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটিকে সনাক্ত করে। দাদির ঠিকানা খুঁঁজে পায় পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায় তাকে। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে করে তাকে কালিহাতি নেওয়া হয়। তাকে অভয় দেয়া হয়। আশ্বাস দেয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার।
[৮] মেয়েটির বর্ণনা ও দেয়া তথ্যমতে আসামীদের সনাক্ত করা হয়। বুধবার রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামীসহ দুই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির একটি পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টাও করছে পুলিশ। মামলার আসামিরা হলো- লালন, রাসেল, সুমন ও রিপন। তাদের সকলের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতির সল্লায়। এর মধ্যে লালন ও রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।