সুব্রত বিশ্বাস: উন্নয়নের দৌড়ে যারা দৌড়াতে পারেন না, তাদের পেছনে ফেলে যেতে নেই- তাদের জন্য ততো দূর অবধিই ব্যবস্থা করে যেতে হবে, যতোটা ব্যবস্থা হলে তারা নিজেদের প্রাথমিক অসুবিধাগুলোকে টপকে অন্যদের সমান স্তরে এসে পৌঁছতে পারেন। কোনোভাবেই যারা নিজেদের জোরে এগোতে পারবেন না, শেষ অবধি তাঁদের বহন করে চলাই রাষ্ট্রের কর্তব্য। অমর্ত্য সেনের লেখা মনে করিয়ে দেবে যে, কল্যাণকামী রাষ্ট্র কোনো নাগরিককে, কোনো কারণেই, অতলে তলিয়ে যেতে দিতে পারে না বলে; রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রত্যেকটি মানুষের হিস্সা আছে বলে।
একটু বেশি তৈরি হতে পারে পরবর্তী জীবনের জন্য- নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তৈরি করে দেওয়া বেশকিছু প্রতিবন্ধকতাকে টপকে উন্নয়নের দৌড়ে ঢুকে পড়তে পারে এই মেয়েরাও। অধিকার আর ন্যায্যতার মাপকাঠিতে দেখা যায়, এমনকি সব ক’টাই যে সমর্থনযোগ্য, এক বারও তেমন দাবি করব না। যথেষ্ট আর্থিক বৃদ্ধি না হওয়া সত্ত্বেও যদি গড় হারের চেয়ে মানবন্নোয়নে এগিয়ে থাকা যায়, তবে অর্থনীতির সেই মডেলটি সম্বন্ধে অন্তত একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব- এই মডেল সম্পদের পুনর্বণ্টনে জোর দিয়েছে। বৃদ্ধির সুফল চুইয়ে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছয় না কিছুতেই। ফলে জিডিপির বৃদ্ধির হারের অঙ্কে এগিয়ে যায়, মানবন্নোয়নের সূচক তাল মেলাতে পারে না সেই গতির সঙ্গে।
অর্থনীতির একটা বিশেষ গোত্রের উন্নতি হয়েছে। সেই পরিসংখ্যানের মধ্যে ঢুকবো না-পুনর্বন্টনের ওপর- সরকারের নতুন নতুন ভূমিকার ওপর, যেখানে গরিব মানুষের প্রাত্যহিকতার খোঁজ রাখে সরকার। অনেক বিধবারই দুবেলা অন্নসংস্থানেরও সামর্থ্য নেই, যদি সরকার পেনশনের ব্যবস্থা না করে দেয়। পুনর্বন্টনের দার্শনিক তত্ত্ব না বুঝলে এটা বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, পুনর্বন্টনের মাধ্যমে, সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারের অধিকতর সংযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের সঙ্গে শিল্পায়নের কোনো বিরোধ নেই। লেখক : ব্যবসায়ী