এম এম নাজমুল হাসান: বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ ১ মে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করছে। শ্রমিকদের বিপ্লবের এতো বছর পরেও কি শ্রমিকরা তাদের নায্য হিস্যা কি বুঝে পাচ্ছে? শ্রমিকরা কি তাদের কর্মস্থলে কাজের সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ, সঠিক কর্মঘণ্টা কিংবা অধিক কর্মঘণ্টার জন্য বাড়তি কোনো মজুরি কি পাচ্ছে? এখনো কি বন্ধ হয়েছে সেই অভিশপ্ত শিশুশ্রম? মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যরে প্রতীক হিসেবে যে মে দিবস পালিত হয়, মালিক- শ্রমিক সেই দূরত্ব, শোষণের মনোভাব কি সত্যি আজ বিলীন, নাকি এতো বছর পরে আজও তা প্রতীয়মান! শ্রমের সঙ্গে যারা প্রতারণা করে সেই শোষক কিংবা মালিক পক্ষ কি শ্রমিকদের সঙ্গে নিজেদের এখনো আলাদা করে রেখেছে নাকি সম্প্রীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছে। প্রায় ১৫০ বছর আগের সেই বিপ্লবের কথা মনে পড়ে, আজও শ্রম ও শ্রমিকরা সেই শিকাগোর হে মার্কেটের ম্যাককরমিক রিপার ওয়ার্কস কারখানার শ্রমিকদের চেয়ে কি উন্নত জীবনধারায় আছে, নাকি সেই অবস্থায় আছে। মে দিবসের তাৎপর্য কি শুধু দিবস পালন, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, সভা-সেমিনারে আবদ্ধ নাকি শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।
বিশ্ব আজ করোনা মহামারিতে জর্জরিত। এর মধ্যে বিপর্যস্ত অর্থনীতি, সমাজ, সামাজিকতা, রাজনীতিসহ জীবন ও জীবিকার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র। দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আর্বিভূত হতে যাওয়া বাংলাদেশও এর প্রার্দুভাবে বিপর্যস্ত। তবুও বর্তমান সরকার এই করোনার প্রকোপ রুখতে লকডাউন দেওয়া, সচেতনতা বাড়ানো, টিকা প্রদানসহ নানান উদ্যোগ ও কাজ করার কারণে দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক অনেক কম। করোনার প্রকোপ রুখতে লকডাউন দেওয়ায় নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের কষ্ট প্রশমিত করতে সরকার শতশত কোটি টাকার মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, যা সরাসরি তাদের মোবাইলে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চলে যায়। দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প হলো রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক শিল্পখাত। এই শিল্পের কারখানার মালিকদের সরকার মোটা অঙ্কের প্রণোদনা দিয়েছে তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য, তারপরও করাখানার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বকেয়া বেতন না দেওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই করা, করোনার মধ্যে জোর করে কারখানায় কাজ করানো ইত্যাদি।
মে দিবস প্রতিষ্ঠার এতোবছর পর কি বলায় যায়, শ্রমিকদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে? পরিবর্তন তো হয়েছে, তবে তা অপ্রতুল, নেহাৎ হাতে গোনার মতো। ফলে মে দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক একটি বৈষম্য, শোষণহীন সমাজ। যেখানে কোনো শাসক ও শোষক থাকবে না, সবকিছুই চলবে সাম্য- আর উদারনৈতিকতার শিক্ষা নিয়ে। তাহলেই নিশ্চিত হবে শ্রমিকদের ন্যায্য হিস্যা। লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা
আপনার মতামত লিখুন :