শেখ মুন: সম্পর্কগুলো সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে না। শক্তিশালীর শক্তিহীনের অবস্থার সুযোগ নেওয়াকে প্রেম বলবেন না। একটি উদাহরণ দিই। সুইডেনে সেক্স ক্রয় বেআইনি। কিন্তু সেক্স বিক্রয় বেআইনি নয়। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছে, এ কি ধরনের আইন? এতো ডবল মেসেজ। কিন্তু যুক্তিটা হলো, এখনও পৃথিবীতে পুরুষেরা সেক্স ক্রেতা, নারী বিক্রেতা। এই আইনটি করার মূল কারণ, একজন নারী তার অসহায়ত্ব নিয়ে সেক্স বিক্রয় করতে বাধ্য হতে পারে কিন্তু তুমি পুরুষ তার অসহায়ত্বর সুযোগ নিতে পারবেনা। তবে কোনো নারী যদি তার নিজস্ব ইচ্ছায় এ কাজ করে তার বিরুদ্ধে আইন নেই। এখন প্রশ্ন তাহলে কিনবে কারা? এ বিষয়ে আইন বলে, এটা সেই নারীর বিষয় কিন্তু আইনের কাজ এটা এনশিওর করা, কোনো নারীর দুর্বলতার সুযোগ যেন পুরুষ নিতে না পারে।
প্রাচীন কাল থেকেই সামর্থ্যবান পুরুষদের ‘উপপত্নী’ রাখার অবাধ সুযোগ দেখে আসছি। একজন পুরুষের যদি ৩০০ বিবাহিত স্ত্রী থাকতো, ৭০০ ছিলো ‘উপপত্নী’। এটা ইসলামপূর্ব বা পরবর্তী আরব, পারস্য, ভারত, আফগানিস্তান, চায়না সবখানে ছিলো। হিব্রু বা ইহুদী, পুরনো টেস্টামেন্টেও পুরুষের এ ভোগবাদের খবর মেলে। যদিও নিউ টেস্টামেন্টে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলে। কিন্তু প্রমাণ তা বলেনা। অনেক কবি সম্রাটের কবিতায় তার প্রিয় উপপত্নী’র প্রতি প্রেমের নিদর্শন মেলে। বহু খেলনার ভেতর একটি খেলনা প্রিয় হয়ে ওঠার মতো অনেক গল্প মেলে। তাকে বলেনা প্রেম। প্রেম হতে হবে একটি স্বাধীন অ্যাক্ট। এমন কি প্রচ্ছন্নভাবেও কারও অসুবিধার সুযোগ নেওয়াকে প্রেম বলার সুযোগ নেই। বিষয়টি মাথায় রাখা দরকারি। বিবাহই কী তবে তাবৎ সম্মানের মাপকাঠি?
এ সম্মানের ক্রাইটেরিয়া তৈরি হয়েছে বলেই সম্মান এবং অসম্মান হিসেবে দুটো গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এ দুটোতেই অধিকার জন্মেছে সামর্থ্যবান পুরুষের। আর খাঁদের নীচে পড়ে যাওয়াদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তা টপকানোর। অনেকে পথে খাঁদে পড়ে যান। টাকা থাকলেই ২০টা গাড়ি কেনার পুরুষ দেখবেন। ভোগের মন্ত্র আমাকে পেতে হবে সারা দুনিয়াটা। এ কেনার অহংকার। এ অসম পুরুষতান্ত্রিক ধনতন্ত্রের মানস। এ অসমতা কাটিয়ে নারী যদ্দিন স্বেচ্ছায় তার প্রেমকে চর্চা করার পৃথিবী গড়ে তুলতে না পারবে ততোদিন তাঁদের জন্য পুরুষতন্ত্র বরাদ্দ রাখবে কিছু শব্দ বৈধ স্ত্রী অবৈধ উপপত্নী রক্ষিতা। বিশ্বাস করুন এ শব্দগুলোর লাইনে বৈধ স্ত্রী শব্দটিও ক্রুদ্ধ হওয়ার মতো অশ্লীল। এগুলো তাদেরই বানানো যারা তাদের আকাশসম ক্ষমতা দিয়ে নারীকে তাদের হেরেমে থাকা পুতুল মনে করে। তাদের ইচ্ছেয় কাউকে তারা কাউকে বৈধ বলবে, কাউকে অবৈধ। আধুনিক ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলছে এ সাপলুডু, টমজেরি। সব পরিস্থিতিতেই নারী নিগ্রহটাই থেকে যাচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম। ফেসবুক থেকে