লালমনিরহাট প্রতিনিধি: [২] দেড় মাস বয়সী ছোট্ট এঁড়ে বাছুরটির বেঁচে থাকতে মা গাভীর দুধই ভরসা। কিন্তু বাছুরকে আটক করে লালমনিরহাটের দহগ্রামের তিনবিঘা করিডোর গেট দিয়ে গাভীটিকে যেতে দেওয়ায় হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। গাভী থেকে বাছুরটিকে আলাদা করার অভিযোগ উঠেছে এক বিজিবির বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো (বিএসবি) সদস্যের বিরুদ্ধে।
[৩] এ ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে।
[৪] সরেজমিনে দেখা গেছে, মা গাভীর দুধ খেতে না পেয়ে ছোট্ট বাছুরটি মানুষের মুখের দিকে চেয়ে হাম্বা হাম্বা শব্দে চোখের পানি ফেলছে। অপরদিকে মা গাভীটি তার বাছুরের জন্য অনবরত ডেকে চলেছে। বাছুরটিকে দুধ খেতে না দিতে পারায় গাভীটির ওলান ফুলে গেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কৃষক আব্দুল জব্বার পাটগ্রাম পৌরসভার সিরাজ মিয়ার নিকট গাভীটি বাছুরসহ বিক্রি করেন।
[৫] গত বুধবার (২১ এপ্রিল) ভারতীয় সড়ক ব্যবহার করে দহগ্রামের তিনবিঘা করিডোর গেট দিয়ে গাভী ও বাছুর পার করতে বাধ সাধে বিজিবির বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো (বিএসবি) সদস্য ইব্রাহিম। সংরক্ষিত তালিকা খাতায় গৃহপালিত গরুর বর্ণনা দেখে গাভীটিকে নিয়ে যেতে দিলেও গাভীর বাছুরটি পার করতে বাধা দেন তিনি। মা গাভীটির সাথে দেড় মাস বয়সী বাছুরটিকে যেতে না দেওয়ায় করুণ শব্দ করে আপ্রাণ ছুটাছুটি করতে থাকে বাছুরটি। একপর্যায়ে ওই গোয়েন্দা সদস্য বাছুরটি অবৈধ বলে জব্দ করে ক্যাম্পে নিয়ে যেতে থাকে।
[৬] এ সময় বিক্রেতা ও ক্রেতা অনুরোধ করে বাছুরটি ফেরত চায়। গোয়েন্দা সদস্য ইব্রাহিম মামলার হুমকি দিয়ে এঁড়ে বাছুরটি বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান। মুহূর্তেই উপস্থিত লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
[৭] এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, স্বনামধন্য বর্ডারগার্ড (বিজিবি) বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি ও আইনের অপব্যবহার করছেন বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য ইব্রাহিম।
[৮] গাভীসহ বাছুরটির ক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, বাছুরটিকে জব্দ করে বৃহস্পতিবার নিলাম দেয়। নিলামে অংশ নিয়ে ১৫ হাজার টাকায় কিনে নেই। বর্তমানে বাজার থেকে দুধ কিনে ফিডার দিয়ে বাছুরটিকে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।
[৯] দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গাভী বৈধ আর গাভীর বাছুরটি অবৈধ এটা কিভাবে সম্ভব? গাভীর ছোট্ট বাছুরুটিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও কর্ণপাত করেননি বিজিবির বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো (বিএসবি) সদস্য ইব্রাহিম।
[১০] বিজিবির বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো (বিএসবি) সদস্য ইব্রাহিম বলেন, যার কাছে বাছুরটি পেয়েছি তার নিকট বৈধ কাগজ না থাকায় আটক করি।
[১১] বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরোর (বিএসবি) এফআইজি মেজর মোস্তাক আহমেদ বলেন, বাছুরটিকে মালিকানাবিহীন পাওয়া গেছে। কেউ বাছুরটিকে বৈধ বলে দাবি করেনি বলে জেনেছি। কেউ দাবি করলে বিষয়টি দেখা হতো।
[১২] রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, বাছুরটিকে তো এ রকম করার কথা নয়। শুনেছি বাছুরটির দাবিদার ছিল না। নিলামের দিনে এ বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়। বিএসবি সদস্য ইব্রাহিম বাছুরটিকে এককভাবে ধরেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :