শেখ সাইফুল:[২]করোনার বিধি নিষেধ না মেনে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ওশরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন উপকুলে পানগুছি নদীতে কয়েক’শ নারী-পুরুষ নদ-নদীতে চিংড়ি পোনা আহরণ করছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পোনা আহরণের এই যত্রতত্র কার্যক্রম।সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফ্রি-স্টাইলে পোনা আহরণের নামে মৎস্য সম্পদসহ জলজপ্রাণী নিধনযজ্ঞ চলছে। প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডকেট একাজে ব্যবহার করছে এক শ্রেণির অসচেতন দরিদ্র মানুষকে।
[৩] বাগদা ও গলদা রেণু আহরণ করায় এর সঙ্গে সুক্ষ্ম মশারি নেটে আটকে মারা পরছে অন্য প্রজাতির মৎস্যসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণি। কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন অভিযানে পোনার চালান আটক হলেও বন্ধ হয়নি মৎস্য সম্পদের নিধনযজ্ঞ। ফলে উপকূলীয় সাগরসহ নদী মৎস্যশুণ্য হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। নষ্ট হচ্ছে জলজ প্রাণির ইকোসিস্টেম। কমছে মাছের প্রজননসহ উৎপাদন।
[৪] বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকুলে পানগুছি নদী, মংলার জয়মনি, উপকুলের বিভিন্ন নদ নদীতে এমন চিত্র দেখা গেছে। চিংড়ি পোনা আহরণকারী প্রান্তিক জেলেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা তারা মাছ ধরছেন।তবে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, আইন অমান্য করে পোনা আহরণ করতে গিয়ে তাদের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ বাড়াতে পারে।
[৫] করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষ যখন নিজ গৃহে অবস্থান করছে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করছে, তখন একেবারে ভিন্ন চিত্র উপকুলীয়াঞ্চলের নদ নদীতে।কয়েক’শ নারী-পুরুষ দল বেধে নদীতে নিষিদ্ধ নেট জাল দিয়ে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন। এসময় কথা হয়-জেলে শাহজালাল শেখে, রহিমন বেগম ও আমিরন বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেল, ‘করোনা নিয়ে নয়, তাদের চিন্তা শুধুমাত্র খাদ্যের জোগান নিয়ে।’
[৬] স্থানীয়রা জানান, চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করার সময় কোরাল, কাঁকড়া, বাইলা, মলা, ডেলা, চেউয়া, তফসে, বাটা, চাপিলা, কুচিয়া, টেংরা, পোয়া, লইট্টা, ভেটকি, ইলিশ, কাচকিসহ আরো অনেক প্রজাতির পোনা আসে। তারা শুধু চিংড়ি পোনা আহরণ করে বাকিগুলো ফেলে দেন। এক সময় এ অঞ্চলে অনেক মাছ পাওয়া যেতো। এখন আর আগের মতো নদীতে মাছ পাওয়া যায় না।
[৭] মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, চিংড়ির রেণু পোনা ধ্বংস করা অবৈধ। যদি কেউ এভাবে করে থাকেন, তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। জনবল সঙ্কট থাকলেও আমরা শিগগিরই এই বিষ পানগুছি নদীতে য়েমোরেলগঞ্জ উপকূল ও পানগুছি নদী নদীর মোহনায় অভিযান পরিচালনা করবো। তবে পোনা আহরণের অধিকাংশ অংশ বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকুলেএলাকায় হওয়ায় বাগেরহাট মৎস্যবিভাগের জরুরি পদক্ষেপ বেশি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
[৮] এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একটি গলদা বা বাড়দা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অন্য ৪৬৩ প্রজাতির মাছের রেণু পোনা ধ্বংস হয়। আর সাথে নদীর পানিতে বাস করা ক্ষুদ্র জীবকণা ধরা হয়, তাহলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৬৩টি। এটা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ। এটা কঠিনভাবে রোধ না করতে পারলে বাংলাদেশের নদীগুলো ধীরে ধীরে মাছ শূন্য হয়ে যাবে। আর রোধ করা গেলে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ বাড়বে ।