রুবেল মজুমমদার: [২] করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কুমিল্লার তরমুজ ব্যবসায়ীরা। তরমুজের ভরা মৌসুম হলেও বিক্রি করতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে জেলার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।এদিকে করোনার ২য় টেডর লকডাউনের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া জেলার অনেক তরমজু চাষিরা। পাইকার নেই বললে ও চলে । স্থানীয় বাজারেও তা উঠাতে পারছেন না লকডাউনের কারণে।কেউ কেউ আবার বাজারে নিয়ে গেলেও ক্রেতা সংকটে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ।
[৩] বৈশাখ মাসের শেষ সময়।প্রচন্ড গরমের পারদও বাড়ছে চড়চড় করে। গরম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তিও।এর মাঝে সরকারের ঘোষিত লকডাউনের কারেন বাজারে ক্রেতা কম।মাঝে মাঝে কয়েকজন আসলেও দমাদামি হিসাব-নিকাশে মিলছে ক্রেতা -বিক্রিতাদের মাঝে ।
[৪] তনু মিয়ার।কুমিল্লার নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার ফল ব্যবসায়ী,১২ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় তরমজু ব্যবসা করে আসছেন।গত মৌসুমে করোনার কারনের দোকানপাট বন্ধ ছিলো। এবার তাই রোজা কেন্দ্র করে ১ লক্ষ ২০ হাজার দুইটি তরমুজের চালান রবিশাল থেকে নিয়ে আছেন।গত কয়েকদিনে মাত্র ১০ টাকার তরমুজ বিক্রি করছেন। ক্রেতা না থাকার পচে গেছে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকার তরমুজ।
[৫] তিনি বলেন লডডাউনের কারনে কোনো কাস্টমার কম।আজ সারাদিনে মাত্র ৪ টি তরমুজ বিক্রি করছি।রাস্তাঘাটে মানুষ হলেও তো মিয়া কাস্টমার আইবো।কি আর করমু সংসারে চালাতে বাধ্য হয়ে দোকান খুলে বসে আছি।দেখি ইফতারে সময় হয়তো কয়ডা কাস্টমার আইবো।
[৬] নগরীর রানীবাজের তরমুজ কিনতে আসার তানজিনা নামের একটা ক্রেতা অভিযোগ করেন বলেন মাঝারি আকারে একটি তরমজু ১৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। মৌসুমে যদি এমন দাম হয়,তাহলে আমরা কিভাবে কিনবো ।শামীম চৌধুরী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, তরমজু এই বছর অধিক দামের কারনে আমি এখনো তরমজু কিনিনি ।খূচরা বিক্রিতা মূল এই দাম বৃদ্ধি করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন ।
[৭] জেলার দাউদকান্দি উপজেলার কয়েকজন তরমজু চাষিরা জানান, মৌসুমের এ সময়টায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ কেনার জন্য তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমাতেন। অথচ করোনার কারণে এখন একজন ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের কাছে তরমুজ কিনতে আসা তো দূরে থাক, তাঁদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।
[৮] উপায়ান্তর না পেয়ে তরমুজ চাষিরা নিজেরাই কোনোমতে বাজারে নিয়ে এসে পাইকারদের কাছে নামমাত্র মূল্যে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে ছোট-বড় প্রতিটি তরমুজের দাম ধরা হয় ৮০-৯০ টাকা করে। তবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজ ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকারও বেশি। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনেও রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে এমন চড়া দামে। ফলে ভোগান্তির রেশটা কৃষকের কাঁধেই রয়ে যায়।
[৯] জেলার মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতি চর থেকে চাষিরা তরমুজ নিয়ে এসে চান্দিনার নিমসাবাজার,চকবাজার ,রাজগঞ্জ,রানীবাজার,পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড,ইলিটগঞ্জ বাজার,সারিভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। সেখানেই কথা হয় মেঘনা উপজেরার থেকে আসা তরমুজ চাষি মিজান রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন এলাকায় কোনো পাইকার না পেয়ে দুই হাজার তরমুজ নিয়ে হাজির হয়েছেন চান্দিনার নিমসা বাজারে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব লোকসানের মধ্যে আছি তরমুজের দাম ২৫০-২০০ টাকা, সেই তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। অথচ চাষাবাদ থেকে শুরু করে প্রতিটি তরমুজের পেছনে খরচ পড়েছে ১৪০ টাকা।’ এ নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
[১০] রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া বলেন, বর্তমানে তার দোকানে প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে তারা আসতে না পারায় দোকান ভর্তি তরমুজ পড়ে রয়েছে।