শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০৮ বিকাল
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একটি ভালর চেয়ে পৃথিবীর দশটি ক্ষতি করছে বিজ্ঞান

কামরুল হাসান মামুন, ফেসবুক থেকে, “পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করছে বিজ্ঞান। এমনকি রাজনীতির চেয়েও বেশি। সহজ ভাষায় পুরোনো কথা বলি, সাগর আর মাটি প্লাস্টিক দিয়ে ধ্বংস করে ফেলছে। সেই প্লাস্টিক বিজ্ঞানের দান। বাতাস ধ্বংস করে ফেলছে, বিজ্ঞান।…..”

উপরোক্ত কথাগুলো লিখেছেন জনৈক একজন কবি। আমি তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই পরিবেশ নিয়ে উনার ভাবনা এবং ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ (প্রায় ৯৯.৯৯%) মানুষই পরিবেশ নিয়ে নির্বিকার। কেউ কেউ অন্যের দোষ নিয়ে মাঝে মধ্যে গালমন্দ করে বটে কিন্তু নিজে এ থেকে মুক্ত নয়। Naively দেখলে সাধারণ মানে আমাদের দেশের গণমানুষের দৃষ্টিতে এই লেখাটি প্রশংসা কুড়াবে কারণ সাধারণেরা তলিয়ে ভাবে না। তলিয়ে ভাবতে হলে বিদ্যাবুদ্ধির যে কসরত করতে হয় সেটা সাধারণেরা করে না। তারা গড্ডালিকায় বা স্রোতে চলে। ওই ছবিটা হিট হয়েছে তো চল দেখে আসি কি আছে এর মধ্যে। এই কি আছে এর মধ্যে দেখতে গিয়ে সাধারণেরা ওটাকে সুপারহিট বানিয়ে ফেলে। এক সময় আমিও এমনই ছিলাম।

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এবং কি একটা ছবি যেন খুব হিট। সহপাঠীরা বলল চল দেখে আসি। সহপাঠীদের আব্দারের ঢলে যোগ না দিলে লিস্ট থেকে নাম বাদ পরার সম্ভবনা থাকে তাই অধিকাংশের দিকে চোখ রেখে বুঝলাম যেতেই হবে। আর এই যাওয়ার মধ্যে মজাও আছে। ছবি কেমন তার চেয়ে বড় কথা বন্ধুবান্ধবরা একসাথে হয়ে একটা জম্পেশ আড্ডা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে উঠার পর থেকে আমার মধ্যে একধরণের পরিবর্তন আসে। এর একটা বড় কারণ তৃতীয় বর্ষে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু নতুন বিষয় যেমন কোয়ান্টাম মেকানিক্স, স্টাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স ইত্যাদি কিছু দার্শনিক বিষয় আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল।
তো যা বলছিলাম ফিরে আসি সেই কথায়। জনৈক সেই কবি ভদ্রলোক হয়ত নিরেট সেই সাধারণের দৃষ্টিতেই বিজ্ঞানকে দেখেছেন। তার কথাগুলো আমি প্রথমেই আমার স্ত্রীকে পড়ালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম এই লেখার মধ্যে তুমি কি কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ? সে সাথে সাথে বলল অবশ্যই।

এখানে বিজ্ঞানের দোষ কোথায়? আমি এই কাজটি প্রায়ই করি। কখনো কখনো কোন বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তৃতীয় মত হিসাবে আমার স্ত্রীর মতামত নেই। কারণ ও যেহেতু বিদেশী ওর মতামতে বায়াস থাকে না। ও একদম আমার মনের কথাটা বলেছে। সাগর আর মাটি প্লাস্টিক দিয়ে ধ্বংস, বাতাস ধ্বংস, স্যাটেলাইট দিয়ে কক্ষপথকে বস্তি বানানো, হাইড্রোজেন বোমা বানানো ইত্যাদির মাধ্যমে বিজ্ঞান পৃথিবীকে নষ্ট করে ফেলেছে। যদিও উনি বলেছেন কিছু দিয়েছে কিন্তু যদি ১ দিয়ে থাকে তাহলে ১০ কেড়ে নিয়েছে। অর্থাৎ ১১-র ভিতরে ১০ই ক্ষতি করেছে কেবল ১ ভালো করেছে। এহেন অকৃতজ্ঞ মানুষ আর হয় না। সব কিছু বাদ দিলাম চোখ বন্দ করে পৃথিবীটাকে একবার বিদ্যুৎ বিহীন কল্পনা করে দেখুনতো। সব কিছু বাদ দিন, চিকিৎসায় বিজ্ঞান যেই অবদান রেখেছে একবার এই অবদানকে বিয়োগ করে পৃথিবীকে কল্পনা করুনতো। এই যে আমরা এখন একটা প্যান্ডেমিকের মধ্যে আছি। এর সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা কি না করছে? হ্যা, ভ্যাকসিন বানানোর ফলে একদল হায়েনা নামক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই ভ্যাকসিনকে গণমানুষের জন্য উম্মুক্ত না করে বিশাল লাভের লোভে ব্যবসা করছে। কিন্তু এর মধ্যে যেই বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কার করেছে তার কি দোষ। যেই বিজ্ঞানী পলিমার আবিষ্কার করেছে পৃথীবিকে প্লাস্টিকের জঞ্জাল বানানোর ক্ষেত্রে তার কি দোষ? যেই বিজ্ঞানী ফিশন আর ফিউশন রিঅ্যাকশন আবিষ্কার করেছে তাদেরকে অ্যাটমিক বোমা বানিয়ে জাপানে ফেলার দায় দিবেন? ফিশন আর ফিউশন রিঅ্যাকশন আবিষ্কারই হতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ গ্রীন এনার্জির উৎস। তাছাড়া এইগুলোর আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের উন্নতির যেই ক্যাসকেডিং ইফেক্ট আছে তা কি ভেবে দেখেছেন? দোষ বিজ্ঞানের না। দোষ বিজ্ঞানকে যারা ক্ষমতার জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার বানায়। এমনকি দোষ প্রযুক্তিরও না। বিজ্ঞানী কিংবা প্রকৌশলীর দোষ খোঁজা মানে আমাদের তলিয়ে ভাবার ব্যর্থতার স্বাক্ষর।

আসলে আমাদের সমাজে এমন প্রচুর মানুষ আছে যারা বিজ্ঞান পড়ে, বিজ্ঞান দিয়ে খায়, বিজ্ঞান দিয়ে পিন্দে, আবার সেই বিজ্ঞানকেই দেখি ছোট করে আর বিজ্ঞানকে নিন্দে। আমাদের দেশে অনেকেই আছে স্টিফেন হকিংকে পছন্দ করে কিন্তু তার আবিষ্কারকে বিশ্বাস করে না। রজার পেনরোজকে পছন্দ করে, আইনস্টাইনকে পছন্দ করে, জেনারেল রিলেটিভিটি পড়ে কিন্তু এদের দেওয়া ইউনিভার্স সৃষ্টির রহস্য পছন্দ বা বিশ্বাস করে না। ওখানে তারা প্যারাডক্স খুঁজে পায়। কি আশ্চর্য না? এই দেশে তাহলে বিজ্ঞানের চর্চা হবে কিভাবে? বিজ্ঞান কি তাহলে কেবল রুটি রুজিরই ব্যাপার?

আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হলো পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মের কাছে বিজ্ঞান চক্ষুশুল। এখন দেখি একজন কবির কাছেও বিজ্ঞান চক্ষুশুল। অথচ কবি এবং বিজ্ঞানীর কত মিল! উভয়েই চিন্তাশীল দার্শনিক। ভালো কবি কিংবা বিজ্ঞানী হতে হলে কল্পনাপ্রবণ দার্শনিক হতে হবে। তারপরও আমি সেই কবিকে ধন্যবাদ দিব যে তিনি অন্তত পৃথিবীর পরিবেশ নিয়ে শংকা ব্যক্ত করেছেন। এই কাজটিইবা আমাদের কতজন করে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়