শিরোনাম
◈ সকালে উঠেই এক লিটার পানি পান: কতটা উপকারী? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? ◈ তারেক-জুবাইদার দুর্নীতির মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’, পূর্ণাঙ্গ রায়ে খালাস হাইকোর্টে ◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস ◈ শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক!

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ০২:৫১ দুপুর
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ০২:৫২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]মন খারাপের যেন আর শেষ নেই, দুঃসংবাদই সারাক্ষণ আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে

হোসেন আবদুল মান্নান: [২] একখানা মুক্ত আকাশের জন্য বিশ্বের দেশে-দেশে মানুষ কি যে অনিশ্চিত দুর্বিষহ সময় যাপন করছে তা বলার ভাষা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকালে চোখে ঘুম নিয়েই ফোনটা ধরি। অন্য প্রান্ত থেকে শব্দ করে কাঁদছেন বরেণ্য কলামিস্ট ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ বোরহান কবীর, " মান্নান ভাই- আমার মা চলে গেলেন"। আমি হতবিহŸল হয়ে কিছু বলার আগেই সে জানালো, এখন ইউনাইটেড হসপিটালে আছেন দুপুরেই রংপুরে নিয়ে যাব। দেশব্যাপী লকডাউন চলছে তবুও আমি আসতে চাচ্ছি, সে বললো, প্রয়োজন নেই, দোয়া করেন। অনেক দিন যাবৎ বোরহান মাকে নিজ হাতে মুখে খাবার তুলে দিতেন। প্রায়ই বলতেন আপনার কলটা মিস করেছি, অন্য রুমে মাকে খাওয়াচ্ছিলাম। প্রতিবারই আমি যেন তার প্রতি দুর্বল হয়ে উঠি এবং মনে মনে বলি, ক'জনের ভাগ্যে এমন মাতৃসেবার সুযোগ হয়। কেননা, আমি মাকে হারাই অনেক আগে, আমার সুস্থ মা আকস্মিক একদিন চলে যান। আমাদের সেবার সুযোগ কোথায় মা'র সেবা নিতে নিতেই মাকে হারিয়ে ফেলি।

[৩]  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের অনুজ সতীর্থ বোরহান উত্তরবঙ্গের মানুষ। বাবা রংপুর বার কাউন্সিলের সদস্য এবং একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। বছর তিনেক আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ছয়বছর যাবৎ ঢাকায় রেখে একান্ত নিভৃতে মা'র কিডনি ডায়ালেসিস করিয়ে যাচ্ছেন বোরহান। অসুস্থ মা'কে তিনি সব সময় ছায়ার মতো করে সঙ্গে রেখেছেন। বোরহান বলতেন, জানেন, আমার মা কেবল রংপুরের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষক নন আমারও আজন্ম শিক্ষক। শুনেছি তার মা প্রায় চল্লিশ বছর শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছিলেন। ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় হেড মিস্ট্রেস। আজ তার চিরবিদায়। বোরহান এর জন্য এটা মেনে নেয়া সহজ নয়, এটাই বাস্তব।

[৪]এদিকে ঘরের দরজা খুলেই দেখি অন্যান্য দিনের মত নিচে মেঝেতে পড়ে আছে 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'। পত্রিকাটির পৃষ্ঠা মেলে ধরে দেখি - মা'র চলে যাবার দিনও উপসম্পাদকীয় জুড়ে বোরহান এর নাতিদীর্ঘ কলাম। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী এবং নানা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তীক্ষ্ণ লেখা।

[৫] আমার ডাক্তার ছেলে আদিত্য বললো, বাবা জানো আজ এ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন নায়িকা কবরী। আমি বললাম কি হয়েছে, সে জানালো করোনা। আমি এক সপ্তাহ আগে থেকেই শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি ছিলাম। ওনার আক্রান্ত হওয়ার সংবাদটি হঠাৎ আমাকে ভীষণ ব্যথিত করে তুলে। যা আমার ছেলেকে কখনো স্পর্শ করবে না বা করতে পারে না। কারণ ছেলের কাছে তিনি কেবল চলচ্চিত্রের একজন নায়িকা কবরী। আমার কাছে কী শুধু এটুকুই ? সত্তুর দশকের শেষ দিকেই কিশোরগঞ্জ শহরের সিনেমা হলগুলোতে তাকে মুগ্ধতা নিয়ে দেখেছি। সারেং বউ এবং প্রয়াত শিল্পী মুহাম্মদ আবদুল জব্বারের সেরা গানটি কখনো বিস্মৃত হওয়ার নয়। ট্রেন মিস করে রাত্রিযাপন করা বা কত মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে আমাদের। এসব এখনকার প্রজন্মের কাছে তাচ্ছিল্যের আরেক নাম। আরও প্রায় সপ্তাহ পরে আমি হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার সময় ওনার খবর নিলে আমার ছেলে এবং নার্সরা জানান, ওনি এখন আগের চেয়ে ভালো।

[৬] এই তো সেদিন মনে হয়, দু' মাসও হবে না। আমি সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রীর কক্ষে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি কবরী মেম মন্ত্রীর সাথে গল্প করছেন। কথা বলার সময় ওনার চোখ হাসতো। এটি সচরাচর দেখা যেতো না। আমি হাত কপালে স্পর্শ করে সালাম জানিয়ে চেয়ারে বসতেই বিনয়ী মানুষ মন্ত্রী আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, "ওনি স্বাস্থ্য সচিব"। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন আপনার কাছে যাব। দয়া করে নম্বরটা দিন তো। তাকে ফোন নম্বর দেয়ার সময় মনের অজান্তেই আমি যেন আমাদের সময়ের সিনেমার সাদা-কালো পর্দায় দেখা সেই আপাদমস্তক বাঙালি নারীকে অবলোকন করেছিলাম। সেদিন বেশ কিছু সময় নানা বিষয়ে কথা বলে আমি বেরিয়ে আসি। তাহলে এ-ই তো নিষ্ঠুরতম সময়। এর নামই কী মহাজীবন! তবে মৃত্যু কী?

৪ বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়