আতাউর অপু ও আখিরুজ্জামান সোহান: রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশবাসীর কাছে মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন কবরীর ছেলে শাকের চিশতী ।
চিশতী জানান, শনিবার বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে দাফন করে হবে।
বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী, নির্মাতা ও সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গত ৫ এপ্রিল পরীক্ষায় কবরীর করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন রাতেই তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় পরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বাংলা চলচ্চিত্রে ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী সক্রিয় ছিলেন সিনেমায়। ক্যামেরার সামনে থেকে চলে গিয়েছিলেন পেছনে, পরিচালকের আসনে।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী। তখনকার স্মৃতি স্মরণ করে একবার কবরী বলেছিলেন, ‘সেখানকার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলাম। কীভাবে আমি মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে সেখানে পৌঁছেছি, সে কথা বলেছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশকে সাহায্যের আবেদন করি।’
১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছাড়িয়ে যায় আগের সব জনপ্রিয়তাকে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা সামনের দিকে। জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী।
অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন এই অভিনেত্রী। পরিচালক হিসেবে নির্মাণ করেছেন সিনেমা৷ দীর্ঘ ১৪ বছর পর দ্বিতীয় সিনেমা তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন। ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামের ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি এর কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ছিল ‘আয়না’। অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন কবরী। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা আত্মজীবনী ‘স্মৃতিটুকু থাক’।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তার আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সবশেষে সিনেমায়। কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের মা।
বছর | চলচ্চিত্র | চরিত্র | পরিচালক | সহ-শিল্পী | টীকা |
---|---|---|---|---|---|
১৯৬৪ | সুতরাং | জরিনা | সুভাষ দত্ত | সুভাষ দত্ত, বেবি জামান | প্রথম চলচ্চিত্র |
১৯৬৫ | জলছবি | ফারুক | ফারুকের প্রথম চলচ্চিত্র | ||
বাহানা | |||||
১৯৬৮ | সাত ভাই চম্পা | চম্পা | |||
আবির্ভাব | রাজ্জাক | ||||
বাঁশরি | রাজ্জাক | ||||
যে আগুনে পুড়ি | রাজ্জাক | ||||
১৯৭০ | দ্বীপ নেভে নাই | রাজ্জাক | |||
দর্প চূর্ণ | রাজ্জাক | ||||
ক খ গ ঘ ঙ | |||||
বিনিময় | মাসুমা | উজ্জ্বল | উজ্জ্বলের প্রথম চলচ্চিত্র | ||
১৯৭৩ | লালন ফকির | ||||
তিতাস একটি নদীর নাম | ঋত্বিক ঘটক | ||||
রংবাজ | চিনি | রাজ্জাক | |||
১৯৭৪ | মাসুদ রানা | সবিতা | সোহেল রানা | সোহেল রানার প্রথম চলচ্চিত্র | |
১৯৭৫ | সুজন সখী | সখী | ফারুক, খান আতা | ||
সাধারণ মেয়ে | নীলা | জাফর ইকবাল | |||
১৯৭৬ | গুন্ডা | বিনা | রাজ্জাক, খলিল | ||
নীল আকাশের নিচে | রাজ্জাক | ||||
ময়নামতি | রাজ্জাক | ||||
আগন্তুক | রাজ্জাক | ||||
আঁকাবাঁকা | রাজ্জাক | ||||
কত যে মিনতি | রাজ্জাক | ||||
অধিকার | রাজ্জাক | ||||
স্মৃতিটুকু থাক | রাজ্জাক | ||||
১৯৭৮ | সারেং বৌ | নবিতুন | ফারুক | ||
বধু বিদায় | মায়া | বুলবুল আহমেদ | |||
১৯৭৯ | আরাধনা | রুপা | বুলবুল আহমেদ | ||
বেইমান | রাজ্জাক | ||||
অবাক পৃথিবী | রাজ্জাক | ||||
কাচ কাঁটা হীরা | রাজ্জাক | ||||
উপহার | রাজ্জাক | ||||
আমাদের সন্তান | রাজ্জাক | ||||
মতিমহল | |||||
পারুলের সংসার | |||||
অরুন বরুন কিরণমালা | |||||
হীরামন | |||||
দেবদাস | বুলবুল আহমেদ | ||||
আমার জন্মভুমি | আলমগীর | আলমগীরের প্রথম চলচ্চিত্র | |||
১৯৮৭ | দুই জীবন | তাহমিনা | বুলবুল আহমেদ |