মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: [২] জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান তার বাংলোয় অফিস রুমে বসে কাজ করছিলেন। এ সময় বইয়ের সেলফে হাত দিতে গিয়েই চমকে উঠেন তিনি। একটি বা দুটি নয়; ছয়-ছয়টি বাচ্চা। তখনো চোখ ফোটেনি। বিড়াল ছানার মতো সবকটি একসঙ্গে লুটোপুটি খাচ্ছে।
[৩] হয়তো মানুষের উপস্থিতি আঁচ করতে পারায়, এরকম কোরাস কণ্ঠে চেঁচামেচি করছিল তারা। নয়তো বা মাকে খোঁজছে- দুধ খেতে। বাঘের বাচ্চা ভেবে এক রকম আঁতকে উঠেন জেলা প্রশাসক। রুমের সবাইকে ডেকে জড়ো করে উল্টে-পাল্টে বাচ্চাগুলোকে পরখ করেন। তখন উপস্থিত জেলা প্রশাসকের স্টাফরা বলতে পারেননি এ বাচ্চাগুলো বাঘের না অন্য কিছুর।
[৪] এক সময় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে খবর দেওয়া হয় বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেবকে। তিনিও নিশ্চিত হতে পারেননি- এ বাচ্চাগুলো কোন প্রাণীর। তবে বাঘের বাচ্চা নয়, সেটি তিনি নিশ্চিত। বিড়াল জাতীয় গোত্রের যে প্রাণীর এটি বলা যায়।
[৫] অবশেষে জেলা প্রশাসকের অনুমতিতে (২৮ মার্চ) সজল দেব এ বাচ্চাগুলো তার হেফাজতে নিয়ে আসে। তখন এ বাচ্চাদের বয়স দু-একদিনের মতো হবে। এখন তাদের বয়স উনিশ দিন।
[৬] বন্যপ্রাণী ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, বাচ্চাদের নিয়ে এসে বেশ সতর্ককের সঙ্গে তাদের দেখাশুনা করতে হয়েছে। সেবা ফাউন্ডেশনে না পাঠিয়ে তার বাসার একটি রুমে রাখা হয়। একটি বাক্স বানিয়ে এতে সবকটিকে একত্রে রাখা হয়। একটানা দুই সপ্তাহ সেবাযত্নের পর একটু বড় হতে থাকে। এক সময় সবকটি বাচ্চার চোখ ফুটতে শুরু করে। গায়ের পশমও হালকাভাবে উঠতে থাকে। তখন আর চিনতে বাকি থাকে না যে, এগুলি গন্ধগোকুল।
[৭] সজল দেব জানান, এক রকম বিপন্ন প্রজাতীর প্রাণী এ গন্ধগোকুল। এক সময় প্রচুর পরিমাণে এ অঞ্চলের পাহাড়-টিলার গাছে-গাছে তাদের বসতি ছিল। উঁচু গাছের গর্তে সাধারণত তারা বাস করে। এবং সেখানেই বাচ্চা প্রসব করে। বছরের এ সময়টিতেই তারা একের অধিক বাচ্চা দেয়। পাহাড়-জঙ্গল ও গাছ-গাছালি উজাড় হয়ে যাওয়ায় এরা এখন প্রায় বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী।
[৮] তিনি আরও জানান, বাচ্চাগুলো আরেকটু বড় হয়ে গেলে সবকটিকে তিনি জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় উন্মুক্ত করে দিবেন। এ বাচ্চাগুলোর প্রতি তার মায়া জন্মে গেছে। বাসায় রেখে যত্ন নেওয়াতে এগুলোর প্রতি তার ঘরের ছোট-বড় সবার এক টান জন্মেছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :