শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ০৬:০১ বিকাল
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ০৭:০৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুভমেন্ট পাস নিয়ে ওড়না ডেলিভারি, জরিমানা হাজার টাকা

সুজন কৈরী : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বুধবার থেকে ৮ দিনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি কাজে বাইরে বের হওয়া নাগরিকদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অনেকেই নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছেন। এ অবস্থায় লকডাউন নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরুরি প্রয়োজন না দেখাতে পারা মানুষদের জরিমানা করছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধের মধ্যে মেয়েদের ওড়না ‘জরুরি’ ভিত্তিতে ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলেন একজন। পথে শাহবাগে তাকে থামায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় তাকে একহাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিধিনিষেধে জনসাধারণের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে র‌্যাব-৩। এতে নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

তিনি বলেন, অর্থদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি একটি অনলাইন পেইজের মালিক। অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক বিক্রি করেন। মোটরসাইকেলে করে কিছু পলিস্টার ওড়না নিয়ে তিনি নিউমার্কেটে যাচ্ছিলেন। যাতায়াতের জন্য তিনি ব্যবসা ক্যাটাগরিতে পুলিশের মুভমেন্ট পাসও নিয়েছিলেন। চেকপোস্টে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, নিউমার্কেট তো বন্ধ। আপনি সেখানে কীভাবে যানে? এছাড়া আপনার এ কাজটি কি জরুরি? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তো জরুরি জানতাম। তাই বের হয়েছিলাম। পরে তাকে বিধিনিষেধ ও পাসের বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয় এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বিধিনিষেধের মধ্যে অনলাইনে ওড়না ডেলিভারির বিষয়টি জরুরি সার্ভিসের আওতায় পড়েনা। এছাড়া নিউমার্কেটও বন্ধ রয়েছে। তাই তাকে জরিমানা করা হয়েছে।

অর্থদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, আমি অনলাইন ডেলিভারিকে জরুরি সেবা হিসেবেই জানতাম। তাই বের হয়েছিলাম।

এছাড়া জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত লেখা স্টিকার সাটানো একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির গাড়ি আটকায় র‍্যাব। গ্লাস নামিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, গাড়ির ভেতরে কয়েকটি কার্টন। কিসের কার্টন জানতে চাইলে চালক জানালেন, খেজুরের বাক্স। ডাক্তারদের গিফট করার জন্য কোম্পানি থেকে পাঠানো হয়েছে। কাজটি জরুরি না হওয়ায় ওই চালককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জাহাঙ্গীর নামের ওই চালক জরিমানা দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি শুধুমাত্র চালক, আমার কাছে এতো টাকা নাই। তাছাড়া আমি কেন জরিমানা দেবো। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আপনি জরিমানার টাকা সংগ্রহ করে দেন। নয়ত তিনদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে। পরে ওই চালক জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান।

অপরদিকে শাহবাগ থেকে হাতিরপুলের দিকে রিকশায় যাওয়া মানু মন্ডলকে চেকপোস্টে আটকায় র‌্যাব। মানু মন্ডলের গলায় বাংলাদেশ কাস্টমসের আইডি কার্ড ঝুলানো ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করলেন, কাস্টমস অফিস কি খোলা? আপনি কোথায় যাচ্ছেন? মাস্ক খুলে ফোনে কথা বলেছেন কেন? কর্মকর্তা বললেন, আমার ভুল হয়েছে, আমাকে জরিমানা করেন। পরে ওই কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

সরেজমিনে শাহবাগ এলাকায় দেখা গেছে, র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হওয়া মানুষদের থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছেন। যারা মুভমেন্ট পাস দেখাচ্ছেন বা যৌক্তিক ও জরুরি প্রয়োজনের কথা জানাচ্ছেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ প্রয়োজনকে জরুরি প্রয়োজন হিসেবে উপস্থাপন করলেই করা হয় জরিমানা। গাড়ি ছাড়াও পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্যবিধি না মানা বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে তারাও পড়েন জরিমানার মুখে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া বের হলেই ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আবার অনেককে বাসায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। জরিমানা আদায় না হলে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে জেল। তবে সড়কে বের হওয়া অধিকাংশ লোকজনই ম্যাজিস্ট্রেটকে হাসপাতালে যাবো বলতে শুনা গেছে। বেলা ১১টা থেকে পরিচালিত অভিযানে মোট ১১ জনকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ১৮ নির্দেশনা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কঠোর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কম প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য জরিমানা নয়, আমরা সংক্রমণ কমাতে মানুষকে সচেতন করতেই অভিযান চালাচ্ছি।

এদিকে বিধিনিষেধ শুরুর দিন বুধবার দুপুরে শিং মাছ কিনতে উত্তরা এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে মালিবাগে যাচ্ছিলেন একজন ব্যক্তি। তিনি চলাচলের জন্য আবেদন করে মুভমেন্ট পাস নিয়েছিলেন। কিন্তু পথে রামপুরায় তাকে থামায় পুলিশ। আজিজ পুলিশ সদস্যদের তার মুভমেন্ট পাস দেখান। পাসে উল্লেখ করেন বাজার করার কথা। এটি দেখালেও কঠোর অবস্থানে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।

কর্তব্যরত সার্জেন্ট শেখ জোবায়ের আহমেদ মনে করেছেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিং মাছ কিনতে উত্তরা থেকে মালিবাগ যাওয়াটা পাসের অপব্যবহার। আর সেই অপব্যবহারের জন্য জরিমানা গুনতে হবে বের হওয়া ব্যক্তিকে। পরে সরকারি আদেশ অমান্য করার অভিযোগে রামপুরায় বিটিভি কার্যালয়ের সামনে বসানো চেকপোস্টে ওই ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয় তিন হাজার টাকা।

সার্জেন্ট বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন করছি। একজন মানুষ উত্তরা থেকে মালিবাগে শিং মাছ কিনতে যাচ্ছে- এটা কোনোভাবেই জরুরি কাজ হতে পারে না।

পুলিশের বিবেচনায় মুভমেন্ট পাসের অপব্যবহার করা অনেকেই গুনেছেন এমন মামলা-জরিমানা। তবে এসব জরিমানা শুধু যারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলের মতো ব্যক্তিগত যান ব্যবহার করছেন তাদের করা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া হেঁটে বা রিকশায় চড়ে যারা বের হয়েছেন তাদের পাস না থাকলে বাসায় ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়