শিরোনাম
◈ নিজে কিছু করতে পারেনি, আবার রোহিত ও কোহ‌লি‌কে নিয়ে কথা বলে!‌ অ‌জিত আগরকারকে চাঁচাছোলা আক্রমণ হরভজ‌নের ◈ বিএনপি না জামায়াত কোন জোটে যাচ্ছে এনসিপি, নানা সমীকরণ ◈ গাজায় হামাসবিরোধী ইসরাইলপন্থি পপুলার ফ্রন্টের নেতা ইয়াসের আবু সাবাব নিহত ◈ ঢাকা–করাচি রুটে সপ্তাহে তিনটি সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ ◈ ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত নামতে পারে তাপমাত্রা, আসছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস ◈ জমি রেজিস্ট্রেশনে স্বচ্ছতা আনতে নতুন নিয়ম: ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর ◈ বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব তুলে ধরলো সরকার (ভিডিও) ◈ জয় ও পলকের বিরুদ্ধে আনা তিন অভিযোগে যা আছে ◈ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা ◈ উত্তরার সাত থানায় নতুন ওসি নিয়োগ: নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় রদবদল

প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:৩০ বিকাল
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:৩০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সালথায় তাণ্ডব : পুরুষ শুন্যতায় ফসলী মাঠে নারীরা

হারুন-অর-রশীদ: [২] ফরিদপুরের সালথায় লকডাউনকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে তান্ডবের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি’র অভিযান অব্যাহত থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলা সদরসহ ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম পুরুষ শূন্য।

[৩] গ্রেফতার ভয়ে এখন পুরুষেরা রাতের বেলায় বাড়ীতে থাকতে পারছেন না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। এদিকে হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ। তবে কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানে নারী-শিশু ছাড়া পুরুষের দেখা মিলছেনা।

[৪] সরেজমিনে এসব গ্রামগুলো ঘুরে নারী-শিশু ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। তবে কোন কোন গ্রামে বয়স্ক ও বৃদ্ধদের দেখা গেলেও তা সামান্য। এদিকে বেশকিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে কৃষিপণ্য পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছেন নারীরা।

[৫] জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা পাট পেয়াজের উপর নির্ভরশীল এটি পাটের মৌসুম পাটের মধ্যে অনেক ঘাস হয়ে গেছে এগুলো পরিষ্কার করতে হবে নাহলে পাট বড় হবেনা। এরপর ক্ষেতে পানি, সার, ঔষধ দিতে হবে, আমাদের পুরুষরা বাড়িতে থাকতে পারছেনা পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে বাধ্যহয়ে এই কাজ আমাদের করতে হচ্ছে। তা নাহলেতো এই ফসল নষ্ঠ হয়ে যাবে আমরা কি খেয়ে বাচব? পাট পেয়াজের রাজধানী খ্যাত সালথা উপজেলায় এ বছর পাটচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি পাটশিল্পের জন্য যে বড় ধরনের অশনিসংকেত তা বালার অপেক্ষা রাখেনা।

[৬] নাম ঠিকানা প্রকাশ না করা শর্তে এক নারী বলেন, বাবা আমার দুটি ছেলে ঢাকা থাকে স্বামী অসুস্থ আমরা সেদিনের ঘটনার কিছুই জানিনা তবুও তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে কারণ শুনেছি যাকে ধরছে সেই আসামী সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমাদের মসজিদে আজ ৫দিন ধরে কোন আজান হয়না মসজিদের দিকে তাকালে চোখের পানি চলে আসে। কাল রোজা ঘরে বাজার নেই এখন আল্লাহুই আমাদের ভরসা। তিনি বলেন, এইযে আমাদের ক্ষেত এখানে সার, পানি, ঔষধ,নিরানি দিতে হবে তাই সরকারের কাছে আমার চাওয়া যারা অপরাধী তাদের বিচার করুক আর যারা নিরীহ তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক যেন আমরা কাজকর্ম করে খেয়ে বেচেঁ থাকতে পাড়ি।

[৭] আরেক নারী বলেন, আমার স্বামী পঙ্গু সবসময় তার শরীর কাঁপে তাকে ধরলেই তার জীবন চলেযাবে তাই সে ভয়ে কোথায় চলে গেছে কোন খোঁজ নেই, যাওয়ার সময় বলে গেছে আমাকে এই মুহুর্তে একটি বারি দিলে আমি বাঁচবনা। তিনি আরো বলেন, তার কিডনি সমস্যা আছে শুনেছি তাকেও আসামী দেওয়া হয়েছে, অথচ সে এসবের কিছুই যানেনা। বাসায় চাউল নেই খেয়ে বাচার মত কোন ব্যাবস্থা নেই তাই ক্ষেতে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা এখন প্রধান মন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বাঁচতে চাই।

[৭] অপর আরেক নারী বলেন, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার আমরা চাই। এতবড় ক্ষতি তারা করেছে এগুলাতো আমাদেরই সম্পদ, আমার এলাকা, আমাদের উপজেলা ক্ষতি করেছি আমরাই, তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ সরকারের কাছে অনেক যন্ত্র আছে সেগুলো ব্যাবহার করে যারা প্রকৃত দোষী তাদের বের করে কঠিন শাস্তি দিক। কিন্তু আমরা যে নিরীহ মানুষ আমাদের মসজিদে আজান হচ্ছেনা রাত পোহালেই রোজা কিছুই কিনতে পারিনি কি খেয়ে রোজা থাকব? একদিকে আমাদের ধান মাইর গেছে আবার পাটও মাইর যাচ্ছে আমরা কিভাবে চলব? আমার স্বামী নসিমন চালায় কোথায় গেছে কোন খোঁজ পাচ্ছিনা। আমরা ভাতে মরছি আল্লাহর কাছে মাপ চাইলেও মাপ পাওয়া যায় আমরা অপরাধ না করেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক সহায়তা করছে, বিধবা,বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে ঘরদেওয়া সব ধরনের সুবিধা সে আমাদের দিচ্ছে তবুও আমরা আমাদের সম্পদ নষ্ট করেছি। সেজন্য সবাই এখন দোষী তাই আমার দাবি নিরীহ মানুষদের নিরাপদে থাকারা সুযোগ করে দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিক।

[৮] সোনাপুর বাজারের এক মুদিখানা দোকানদার বলেন, গত ৬ তারিখ থেকে দোকান করতে পারছিনা রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে কখন এসে ধরে নিয়ে যায়।

[৯] এছাড়া বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এখানকার মানুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে আছে। বেশিভাগ যুবকেরা গ্রেফতার ভয়ে বাড়ীতে নেই। আতঙ্কে অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে।

[১০] জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। তবে, নিরীহ কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমরা চাইনা কোনো নিরীহ লোক হয়রানি হোক। আমরা ঘটনার দিনের সংগৃহীত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রেফতার করছি। তবে, নিরীহ কাউকে যদি আটক করা হয়-ই তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।

[১১] উল্লেখ্য, সম্প্রতি (৫ই এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় বিধিনিষেধ কার্যকর করতে লোকজনকে পেটানো হয়েছে- এমন গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘেরাও করে তান্ডব চালায় স্থানীয়রা। ওই তান্ডবের ঘটনায় ৫টি মামলা হয়েছে এতে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় চার হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়