রিয়াজুর রহমান : ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ চৌধুরী স্ত্রী ইসরাত জাহান চৌধুরী আরো বলেন, আমার স্বামী মোর্শেদ চৌধুরীর ফুফাতো ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ,পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও সৈয়দ শাকিব নাইমুদ্দিনের কাছ থেকে ২০১১ সালে ব্যবসার সূত্রে ২৫ কোটি টাকা নেন আমার স্বামী। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এর বিপরীতে লভ্যাংশ সহ ৩৮কোটি টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধ করার পরও ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে আমার স্বামীর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হুমকি-ধমকি দিয়ে আরো টাকা দাবি করছিল।
২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে পাঁচলাইশ'র সৈয়দ শাকিব নাইমুদ্দিনের এমএম টাওয়ারে আটকে রাখা হয়ে। আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। আমার স্বামী, আমার ও আমার মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। । এই সময় তারা আরো ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় । এই নিয়ে আমি একটি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করি। ব্যবসায়ে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ সুদে আসলে ফেরত পাওয়ার পরও জমানত চেক ব্যবহার করে মামলা করেও তারা ক্ষ্যান্ত হন নাই । প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও আমাকেও নির্যাতন করে, বাসায় আক্রমণ, আমার কন্যাকে অপহরণ, স্বামীকে খুন করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করে, তাহাদের নির্যাতনের কারণে আমার স্বামী আত্মহত্যার মত কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন। যা তিনি আত্মহত্যার আগে সুইসাইডাল নোটে উল্লেখ করে গেছেন।
রোববার ( ১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহনের নেপথ্যে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, পাওনার অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার পরও জামানত হিসেবে দেওয়া চেকগুলো ফেরত না দিয়ে আপস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীন অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।
অত্যাচার-নির্যাতন থেকে চিরমুক্তি পেতে স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। হুমকিদাতাদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে আমরা চরম অসহায়। আমি ও মেয়ের জীবন ও মানইজ্জত নিয়ে চরম শঙ্কিত রয়েছি। প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে স্বামীর আত্মহননের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিচার দাবি করছি।
এসময় মা নুর নাহার বলেন, ছেলে পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়ার পর আরও বেশি টাকা দিয়েছে। কিন্তু আরও টাকার জন্য মামলার আসামিরা যখন তখন হুমকি, ভয় ভীতির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করে আমার ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই।
উল্লেখ্য, বুধবার (৭ এপ্রিল ) ভোরে চট্টগ্রাম নগরের পাচঁলাইশ থানার মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নাহার ভবনের ৬ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন- মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল।