অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: শিক্ষা ও গবেষণা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা এই প্যান্ডেমিক এসে আরও বেশি করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। এরই আলোকে এইবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করছেন যে এইবার তারা জিডিপির ২ শতাংশ গবেষণায় বরাদ্দ দেবেন। মানে জিডিপির ২ শতাংশ কেবল গবেষণায় বরাদ্দ। আর আমরা গোটা শিক্ষা আর নামমাত্র গবেষণা, প্রযুক্তি খাত, আমলাদের বিদেশে ট্রেনিং খাত ইত্যাদি সব মিলিয়ে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দিই। তাহলে এইবার বুঝুন আমরা কীভাবে একটা টেকসই উন্নত জাতিতে পরিণত হবো? সেজন্যই দেখা যায় স্মার্টফোন ব্যবহারে এনালগ নেপালেরও পেছনে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কেবলই কি স্মার্টফোন ব্যবহারে? ইন্টারনেট, মোবাইল ডাটার গতির দিক থেকেও বাংলাদেশ পৃথিবীতে একদম তলানিতে। এমনকি ইথিওপিয়া কিংবা সোমালিয়ারও নিচে। আরো আছে। স্ত্রী নির্যাতনের হারে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। নলেজ ইনডেক্সেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তলানিতে।
শিক্ষার মানের দিক থেকেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তলানিতে। গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে একদম শেষের দিকে। Global Passport Power Rank-GI বাংলাদেশ তলানিতে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে সত্যিই এগিয়েছেও অনেক। যেমন নারী শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, জনশক্তি রফতানি, প্রবাসী আয়, শিশু মৃত্যু ইত্যাদি বেশকিছু ক্ষেত্রে যেমন অনেক সাফল্য এসেছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে অবনতিও হয়েছে অনেক। যেইসব ক্ষেত্রে আপাত সাফল্য এসেছে সেগুলোর কোনোটিই আসলে টেকসই সাফল্য না। আজ যদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয়, ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো যদি গার্মেন্টসের বিকল্প বাজার খুঁজে পায় তাহলেই আমাদের অনেক সাফল্যে একদম ধস নামবে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন উন্নয়ন যারা ঘটাবে তারা উন্নত মানের হবে। আর উন্নত মানের মানুষ হওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো শিক্ষা।
একটি দেশের অধিকাংশ মানুষ যদি মানসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয় সেই দেশের সমস্যার কোনো অন্ত থাকবে না। সমস্যাগুলো পেনপেনানির মতো লেগেই থাকবে। দলে দলে মারামারি, ছাত্রে ছাত্রে মারামারি, গ্রামে গ্রামে মারামারি ইত্যাদি প্রিমিটিভ আচরণ আমাদেরকে প্রতিদিন সংবাদপত্রে পড়তে হয়। তাই জিডিপি ন্যূনতম ৫.৫ শতাংশ শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ আমেরিকার চেয়ে আমাদের বেশি জরুরি। কিন্তু আমাদের সরকারগুলো ইচ্ছে করেই দেয় না। কারণ তারা জানে জনগণ শিক্ষিত হয়ে গেলে তাদের নিয়ে তারা খেলতে পারবে না। ফেসবুক থেকে শাহিন
আপনার মতামত লিখুন :