শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:২৬ সকাল
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিচয়পত্রের জটিলতায় আটকে আছে ২ হাজার শ্রমিকের শেষ সম্বল

নিউজ ডেস্ক: খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি পাটকলের শ্রমিক ছিলেন সলিম উদ্দিন। পাটকলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্র্যাচুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার টাকা পাওনা হয়েছে তার। কর্মসংস্থান হারিয়ে তার শেষ সম্বল বলতে এটুকুই। পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে এ টাকাও এখন তুলতে পারছেন না তিনি। কারখানার পরিচয়পত্রে তার নাম লেখা রয়েছে মো. সলিম। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে নামের ভিন্নতার কারণে তার পাওনা টাকার পুরোটাই এখন আটকে গিয়েছে।

চট্টগ্রামের আরেক পাটকল কারখানার শ্রমিকের নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা আব্দুর রহমান। কারখানার নথিতে আছে মো. রহমান। ফলে একই জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে তাকেও।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫ পাটকলের দুই হাজার শ্রমিক এখন এ সমস্যার ভুক্তভোগী। তাদের কারখানার নথি বা পরিচয়পত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অমিল পাওয়া গিয়েছে নানা মাত্রায়। কোথাও নাম লেখা হয়েছে অসম্পূর্ণভাবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে পিতার নামে। বানান বিভ্রাটও রয়েছে অনেক। কারখানা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের এসব ভিন্নতার কারণে পাওনা অর্থ তুলতে পারছেন না তারা। বিজেএমসি বলছে, শুধু এ পরিচয়পত্র জটিলতার কারণেই পাটকল শ্রমিকদের নগদ হিসেবে পাওনা ১১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পারেনি সংস্থাটি।

এ নিয়ে সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিজেএমসি। এতে দেখা যায়, শ্রমিকদের মোট পাওনা অর্থের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হচ্ছে নগদে। এজন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। পরিচয়পত্রের নাম জটিলতার কারণে পরিশোধ করা যায়নি ১১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২১টি মিল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।

প্রসঙ্গত, শ্রমিকদের পাওনা টাকার অর্ধেক নগদে পরিশোধ করা হলেও বাকি ৫০ শতাংশ দেয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ বলেন, কিছু শ্রমিকের আইডি কার্ডের নামের সঙ্গে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের মিল নেই। এজন্য আমরা এসব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে পারছি না। পাটকলগুলো থেকে এ বিষয়ে সমাধান করতে না পেরে আমাদের কাছে পাঠিয়েছিল। আমরা যাচাই-বাছাই শেষে তা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

১৯৭২ সালে বিজেএমসি প্রতিষ্ঠাকালে সংস্থাটির অধীন পাটকল ছিল ৭০টিরও বেশি। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে এগুলো একের পর এক বন্ধ বা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। এভাবে বিজেএমসির অধীন মিল সংখ্যা কমতে কমতে নেমে আসে ২৫-এ। গত বছর এগুলোও বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য হলো দেশের পাট শিল্পকে প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনা ও আরো শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য থেকেই পাটকলগুলো বন্ধ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত এ ২৫ পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে গত বছরের ১ জুলাই থেকে। এসব পাটকলের স্থায়ী শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকরি অবসায়নের সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। মিলগুলোয় স্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৬০৯। তাদের মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৩ সালের পর অবসর নেয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের পাটকলগুলোর কাছে পাওনা বকেয়া ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। অবসায়নকৃত ও অবসরপ্রাপ্ত এ শ্রমিকদের মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেই এ পাওনা এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে তাদের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে, বাকিটা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যর্থতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দিয়েছে। পাটকলগুলো পরিচালিত হয়েছে দীর্ঘদিনের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে। পশ্চাত্পদতা ছিল নতুন পণ্য উদ্ভাবনের দিক থেকেও। এছাড়া সরকারি পাটকলগুলোকে ঘিরে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগও ছিল অনেক দিন ধরে।

অন্যদিকে কারখানাগুলোর পণ্য বহুমুখীকরণে পিছিয়ে থাকার উদাহরণ হিসেবে পাটসুতাকে সামনে নিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের কারখানাগুলোয় পাট থেকে মাত্র পাঁচ-সাত ধরনের ইয়ার্ন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী ভারতের কারখানাগুলোয় ইয়ার্ন তৈরি হচ্ছে ১১০টির বেশি। ফলে পাটের সুতাভিত্তিক পণ্য তৈরিতেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। এসব কারণেই নানা প্রয়াস নিয়েও পাটকলগুলোকে লাভজনক করা যায়নি।

তবে পাট শিল্পের পুনরুদ্ধার এখনো সম্ভব বলে অভিমত খাতসংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, পাট দিয়ে এখন নানা ধরনের নতুন ও উদ্ভাবনী পণ্য তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি পাট পাতার চায়েরও এখন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এসব চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে পাট শিল্পের পুনর্জাগরণ সম্ভব।

জানা গিয়েছে, বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি, জিটুজি অথবা লিজ মডেলে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি কর্মপরিকল্পনায় অনুমোদনও দিয়েছেন। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বিজেএমসির মালিকানাধীন সম্পত্তির মূল্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া কারখানাগুলোর জমি রয়েছে ১ হাজার ২০০ একরের বেশি। বন্ধ হয়ে পড়া এসব পাটকলের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মিল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ নিরাপত্তা দল নিয়োজিত রয়েছে। - বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়