অনির্বাণ আরিফ: ধরেন শেখ হাসিনার পতন হলো এরপর দেশে হেফাজত ক্ষমতায় আসলো। হেফাজত ক্ষমতায় আসার পর দেশে ইসলামি শরীয়া আইন জারি হলো। তারপর নারীদের চতুর্থ শ্রেণির পর গৃহবন্দী করা হলো পুরুষের সেবাযত্ন করার জন্য। তরুণদের প্যান্ট-শার্ট খুলে লম্বা পাজামা-পাঞ্জাবি পরানো হলো। দেশে সংগীত, সিনেমা, সাহিত্য, নৃত্যকলা, শিল্পচর্চা বন্ধ করা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে এবং ছেলেদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝ বরাবর দুই ভাগ করা হলো। এসব চলবে হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে। এই যে কিছু বৈপ্লবী মেয়ে বুঝে না বুঝে হেফাজতের পক্ষ নিচ্ছে তাদের তখনকার অবস্থা কী হবে আমি সেটা ভেবে কেবল ইরানে খোমেনি সরকারের হাতে গৃহবন্দী হওয়া মেয়েদের কথা স্মরণ করছি। এই যে কিছু ইমোশনাল তরুণ যারা থ্রি-কোয়ার্টার পরে, রোদচশমা লাগিয়ে পাশ্চাত্য সংগীত শোনে এই তরুণদের তখন মুখের অবয়বটা ভাবলে আমার ভেতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে। এই যে সংগীত গেয়ে তারকা, সিনেমা করে মহাতারকা, ইউটিউব, ফেসবুক করে সেলিব্রিটি, এই যে প্রতিবছর কবিতার বই বের করে কিছু আবেগীয় কবি, এই যে কিছু বাম বৈপ্লবী শিল্পকলা, চিত্রকলা, বিজ্ঞান, রাজনৈতিক চর্চা নিয়ে দিনরাত মাত হয়ে থাকে তাদের কী হবে তখন।
আফগানিস্তানের সাধারণ শিক্ষিত মানুষজন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ধর্মরাষ্ট্র কী। ইরানে সত্তর দশকে বেড়ে ওঠা আধুনিক তারুণ্য বুঝেছে ধর্মরাষ্ট্র কীভাবে ব্যক্তির সৃজনশীলতাকে গলা টিপে ধরে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এখন ধর্মতাত্ত্বিক মৌলবাদ থেকে মুক্তি চাইছে। আমি সরকারের পক্ষের লোক নই। আমি গণতন্ত্রমনা। আমি চাই না দেশে ভোটের বাক্স হাইজ্যাক হোক। আমি চাই না বিরোধী দল লুকিয়ে পালিয়ে বাঁচুক। আমি চাই সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবিক অধিকার অক্ষুন্ন থাকুক। কিন্তু আমি এসব চাই বলে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ধর্মতন্ত্র আসুক সেটা কখনোই চাইবো না। আমি চাইবো না এই একদলীয় সরকারের পতন হয়ে একটি উগ্রবাদী তালেবানি চিন্তার দল চিরদিনের জন্য ক্ষমতা কামড়িয়ে ধরুক। যে কোনো ধরনের স্বৈরাচার, একনায়কতন্ত্র, ফ্যাসিবাদের চাইতে ধর্মভিত্তিক তালেবানি গোষ্ঠী বেশি ভয়াবহ এটা প্রমাণিত সত্য। ফেসবুকে লিখে কখনো আমি লাভ ক্ষতির চিন্তা করি না কিন্তু এই দেশটার চিরতরে ক্ষতি না হোক সেজন্যই ফেসবুকে লিখি, বিবেকের দায় থেকে লিখি, লিখতে হয়। ফেসবুক থেকে, মামুন