নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পে খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরে ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ খাতে সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা গেলে বিদ্যুতের ব্যবহার ১৭.৬ শতাংশে নেমে আনা সম্ভব। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রেরণা দেওয়া জরুরি।
শনিবার (২৭ মার্চ) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত, ‘গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টরে এনার্জি সাশ্রয়ের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনা করেন, এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, শিল্পের কাছে বেশি বেশি শুনতে হবে তারা কি চায়। বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে, তাদের সমস্যাটা বুঝতে হবে। কিভাবে সংখ্যা বাড়ানো যায় এনার্জি অডিটিং। যারা অডিটিং করবে সাটিফিকেশন দিবে তাদের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। ব্যাংক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন করতে হবে। অনেক সময় ঋণের জন্য ঘুরতে হয়। অল্প টাকার জন্য এতো দৌড়াদৌড়ি করতে চায় না। যেনো তারা হতাশ না হয়। প্রক্রিয়াটা সহজ না হলে মানুষ হতাশ হয়।
উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে স্বপ্ন নগরের মতো জিরো ওয়েস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। স্বপ্ন নগর দেখে আসতে পারেন। সেখানে হিউম্যান বর্জ্যকে ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে তারাও নানাভাবে লাভবান হবেন।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, প্রত্যেকটা ভালো কাজের জন্য ইনসেনটিভ দরকার। ইনসেনটিভ বলতে শুধু আর্থিক তা না, অনুপ্রেরণার জায়গাটা নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশে ১৩৩টির মতো গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে, ৫০০টির মতো লিড সাটিফাইড প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বিশ্বের ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে বাংলাদেশেই ৭টি। এই শিল্পে ৪১ লাখ লোক কাজ করছে। আমাদের কিছু ভুল হতেই পারে। শুধু যদি গালিগালাজ শুনি তাহলে খারাপ লাগে। অডিটিংটা শুনতে কেমন লাগে, মনিটরিং নামকরণ হতে পারে।
তিনি বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কোনো উদ্যোগ সফল হয় না। আমাদের টেকসই শিল্পের শ্লোগান অনেক আগে উঠেছে। আক্ষরিত অর্থে কাজটি অনেক দেরিতে কাজ শুরু করেছি। সবুজ বিপ্লব হতে হলে সমস্ত ফ্যাক্টরিকে নিয়ে করতে হবে।
আমরা চেষ্টা করবো আমাদের বলা দরকার। আমরা গত বাজেটে টিওএফকে চেয়েছিলাম। টিওএফকে হয়েছে, কিভাবে নেবো। স্রেডা স্পেশাল কোম্পানি এসপিভি মডেল করে করতে পারে।
এনার্জি ইফিসিয়েন্সে যারা হবে তাদের করপোরেট ট্যাক্স যেনো ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। শুধামাত্র বায়ার কি বললো তা না করে, ছোটো খাটো শিল্পেও অ্যাওয়ার্ড দেওয়া যায় তাহলে ভালো হয়।
স্রেডার চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, স্রেডার জন্মটাই প্রমাণ করে সরকার সাশ্রয়ী এনার্জির বিষয়ে কতটা আগ্রহী। ১২টি প্রতিষ্ঠানের এনার্জি অডিট করেছি। এটি সত্য কথা অনেক সময় পাবলিস ডকুমেন্ট থাকে না। আমরা বই আকারে বের করবো। এনডিসিতে কার্বন ইমিশন কমানোর কমিটমেন্ট করেছি, এসব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ীর বিকল্প নেই। বিজনেস কেস আকারে তুলে ধরতে পারি। আমরা সেটি করবো।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম বলেন, কেস স্টাডিগুলো লিপিবন্ধ করে পৌঁছে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ফাইন্যান্সিং প্রকল্প নেওয়া হয়। এতোদিন কতোজনকে দিয়েছেন, কি কাজে দেওয়া হয়েছে, ফল কি হয়েছে, মনিটরিংটা করা হয়নি। এটি তুলে ধরা দরকার।
বুয়েট মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল হক বলেন, আমরা প্রচুর অর্জন করেছি, কিন্তু আরও হওয়া উচিত ছিল। এখন পর্যন্ত লো হ্যাঙ্গিং ফুড নিয়ে কথা বলছি। পে-ব্যাক ৩ বছর থেকে ৫ বছর। তাহলেতো নিজেরাই বিনিয়োগ করার কথা। এখন সময় এসেছে পাইলট প্রকল্প আকারে তুলে ধরা। সেখানে দেখাতে হবে, কতো বিনিয়োগ, কিভাবে সাশ্রয় হচ্ছে, এখন কত মুনাফা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথম যে সাটিফিকেশন পরীক্ষা হয়েছে বুয়েট স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে। ১৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে মাত্র পাস করেছে ১ জন, কেনো। আমাদের কোয়ালিটি অডিটর না থাকে তাহলে কে নিশ্চিত করবে। পরীক্ষার্থীরা বলেছে, আমরা মেশিন চালাই এখন ক্যালকুলেট করতে ভুলে গেছি।
তিনি বলেন, গ্রিন প্রোডাক্ট হয তাহলে ফিন্যান্স করবো। কোনটাকে গ্রিন প্রোডাক্ট বলবো, আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড নাকি বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ড হবে। বাংলাদেশের বেজডলাইন ঠিক করতে হবে। কেউ যদি মোর গ্রিন হয় তাহলে তাকে বেশি ইনসেনটিভ দেওয়া উচিত।
বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমরা রুফটপ সোলারে যেতে পারি, এ ক্ষেত্রে যদি ইনসেনটিভ দেওয়া হয়, তাহলে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। সেই দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন রয়েছে। উদ্দেশ্য ভালো, সবার মনেই এনার্জি সেভিং থাকা উচিত।
ইডকল’র চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার নাজমুল হক বলেন, ৫ বছরের যে প্লান ছিল, আমরা দুই বছরে অর্জন করেছি। আমরা স্বল্পসুদে ফান্ডিং করছি, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য।
পস্রডার সদস্য (ইইএন্ডসি) ফারজানা মমতাজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ শিল্পে, আবাসিকে ৩২ শতাংশ এবং ট্রান্সপোর্ট খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১১ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহৃত মোট বিদ্যুতের মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরে ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে যদি সাশ্রয় নিশ্চিত করা যায় তাহলে ১৭.৬ ভাগে নেমে আসবে বিদ্যুতের ব্যবহার। এ খাতে ৪১.৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর সুযোগ রয়েছে।
এনার্জি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে শুধু এনার্জি কস্ট কমে যাচ্ছে এমন না। পাশাপাশি কারখানার পরিবেশ উন্নত হয়, পণ্যের কোয়ালিটি বেড়ে যায়। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পেইন জরুরি। স্রেডা সেই উদ্যোগ নিয়েছে।
এনার্জি চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে, সে তুলনায় উৎপাদন বাড়ছে না। আমরা যদি সাশ্রয়ী হই তাহলে ব্যবহার কমবে। এ জন্য মাস্টারপ্লান তৈরি করা হয়েছে, ২০২০-২১ সালে ১৫ শতাংশ সাশ্রয়ী, ২০ শতাংশে নামিয়ে আনবো ২০৩০ সালে। আমরা নির্দিষ্ট কিছু মেশিনারিজের জন্য স্বল্পসুদে ফাইন্যান্স করছি। এই ঋণগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে যে মেশিনারিজ নিতে চান সেগুলো স্রেডার সাটিফায়েড হতে হবে।
তিনি বলেন, স্রেডা কাজ করছ। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ডাটাগুলো সেভাবে পাচ্ছি না। টেস্টিং ফ্যাসিলিটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাটিফায়েড এনার্জি অডিটরের ঘাটতি রয়ে গেছে।
জিআইজেড’র সিনিয়র উপদেষ্টা শফিকুল আলম বলেন, আরএমজি সেক্টর ২৮ শতাংশ প্রাইমারি এনার্জি ব্যবহার করছে। সাশ্রয়ী নিশ্চিত করা গেলে সাপ্লাই চেইনেও ভালো ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ মেয়াদী, কোম্পানি ভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমরা সে জন্য বেশ কিছু ট্রেনিং দিয়েছি, দিচ্ছি। বাজারে এলইডি লাইটের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা জরুরি। যাতে লো গ্রেডের কোনো লাইট বাজারে থাকতে না পারে।