শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে আগুন, পুড়ে গেছে যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সামগ্রী 

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২১, ০৪:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এম. নজরুল ইসলাম: জনসমুদ্রে গণজোয়ার তোলা সেই দিন

এম. নজরুল ইসলাম: সে এক দিন এসেছিল বটে বাঙালি জাতির জীবনে। ৭ মার্চ ১৯৭১। জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ভাষণ দেবেন। সকাল থেকেই প্রতীক্ষার প্রহর গুণেছে মানুষ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভীড় জমিয়েছিলো রমনার রেসকোর্স ময়দান, আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। জনসমুদ্রে গণজোয়ার তোলা, ইতিহাস গড়া এক অপরাহ্নে তিনি এলেন। মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করলেন মানুষেরই মনের কথা। ‘ঘরে ঘরে দূর্গ’ গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নিয়ে ঘরে ফিরে গেল মানুষ। চরম সংকটের দিনে জাতি নির্দেশনা পেয়েছিলো ইতিহাসের সেই বরপুত্রের কাছ থেকে। তার জাদুকরি সম্মোহনী শক্তিই বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল গুলির সামনে বুক পেতে দিতে। তিনি বরাভয় দিয়েছিলেন বলেই ভয় পায়নি জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ইতিহাসের অনন্য ভাষণে গোটা বাঙালি জাতির প্রাণের সব আকুতি ঢেলে দিলেন। তা ছিল, অধিকার-বঞ্চিত বাঙালির শত হাজার বছরের আশা-আকাক্সক্ষা এবং স্বপ্নের উচ্চারণে সমৃদ্ধ। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ৭ মার্চ এক অত্যুজ্জ্বল মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন তার সর্বশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন এটা ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার পরই সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন। আর সে কারণেই ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসভার জন্য সমগ্র পাকিস্তানের সব মানুষ উৎকণ্ঠিত চিত্তে অপেক্ষা করছিলেন। যদিও ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ আয়োজিত সভায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। ঐদিনই তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠের ভাষণটি বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলো। এই ভাষণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। দিলেন নির্দেশনা। কী পাচ্ছি আমরা এই ঐতিহাসিক ভাষণে? তার এই ভাষণে আমরা পাচ্ছি সামরিক নির্দেশনা। তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দেবার না পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে। ...আমরা ভাতে মারবো। আমরা পানিতে মারবো।’ সেইসঙ্গে জনযুদ্ধের কুশলী আহ্বান জানালেন এভাবে, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল¬ায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো- এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্ল¬াহ।’ বঙ্গবন্ধু একজন রাজনৈতিক নেতা, সমরবিদ নন। কিন্তু তার বক্তব্যে এই সামরিক কৌশলের বিষয়টি অবলীলায় উঠে এলো কী করে? আজকের দিনের সমরবিদদের জন্য এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে।

ভাষণের শেষ দুটি বাক্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক ভাষণের এই সর্বশেষ দুটি বাক্য পরবর্তী সময়ে বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামে অমূল্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল এক অনুপম অমর কবিতা। ছন্দোময় সে ভাষণ ছিলো প্রাণস্পর্শী। উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ছিলো উদ্দীপনাময় অথচ কী আশ্চর্যজনকভাবে সংযত। লাখো মানুষের হৃদয়ে তা অনুরণিত হচ্ছিলো-জয় বাংলা ধ্বনিতে আর করতালিতে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বেলিত জনতা তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর এই দৃপ্ত ভাষণ সে সময় সারা বাংলার মানুষ, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ইপিআর, পুলিশ এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের কাছে স্বাধীনতার সবুজ সংকেত হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল।
কর্নেল জিয়াউর রহমান (১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ‘মেজর’) ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে লেখেন: ‘... তারপর এলো ১লা মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সারা দেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন। ...৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক ‘গ্রিন সিগন্যাল’ বলে মনে হলো।’ প্রবন্ধটি ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলা এবং ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কৌশলগত দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য ছিলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু সারা পাকিস্তানের মানুষকে এটা দেখাতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, সমগ্র পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও সামরিক জান্তা তাকে ক্ষমতায় বসতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের প্রথম আক্রমণকারী প্রতিপন্ন করতে চাননি। বঙ্গবন্ধুর কৌশলের কারণে বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহানুভূতি পেয়েছিল বাঙালিরা। অন্যদিকে পাকিস্তানিরা সমগ্র বিশ্বে খুনি ও লুটেরা হিসেবে নিন্দা এবং ঘৃণা কুড়ায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ (এমওডাব্লি¬উ) তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমওডবি¬উ-তে এটাই প্রথম কোনো বাংলাদেশি দলিল, যা আনুষ্ঠানিক ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হবে। এছাড়া বিশ্বের ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ঐতিহাসিক এই ভাষণটি।
আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। বলতে গেলে ১৯৭১ সালের এই দিনেই স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল বাঙালি জাতি। বিশ্বাস বুকে নিয়ে উর্বর পলিতে দৃপ্ত পা রেখে আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে যে পথ হাঁটছি আমরা, যাঁর প্রেরণায়, তিনি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী’। সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ মামুন

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়