ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী চলমান তীব্র বিক্ষোভ-আন্দোলন দমাতে সেনার ধরপাকড় ও সাঁড়াশি অভিযান অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল।
কয়েকদিন ধরে সেই ধরপাকড়ের গতি ক্রমেই চরম রূপ নিচ্ছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত প্রতি রাতেই নিয়ম করে গ্রেফতারি অভিযান চালাচ্ছে সেনা-পুলিশ।
রাজধানী নেপিদো ও প্রধান দুই শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়সহ সব শহরেই বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। মধ্যরাতের এই ধরপাকড় অভিযানে তটস্থ স্থানীয়রা। তবে এর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদী জনতা। রাতে কেউ ডাকলে কিংবা দরজায় টোকা দিলেও দরজা-জানালা খুলছে না।
প্রতিবেশীদেরও বলে দিচ্ছে, ‘খবরদার, রাতে কেউ দরজা খুলবেন না।’ মিয়ানমার ফ্রন্টিয়ারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনে (সিভিল ডিজ-এবডিয়েন্স মুভমেন্টে-সিডিএম) যোগ দেওয়া মিয়ানমার এয়ারলাইন্সের কর্মীদের কাজে যোগ দিতে হুমকি দিয়ে পুলিশ বলেছে, ‘যে কোনো সময় তোমাদের গ্রেফতার করতে পারি।’ মিয়ানমার ফ্রন্টিয়ার জানিয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থান-পরবর্তী জীবন দুর্ভাগ্যজনক হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিনই কোনো অধিকার কর্মী বা সেনাবিরোধী ভিন্ন মতাবলম্বী সরকারি কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব আটক ও গ্রেফতারের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুক বা টুইটারে ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রতি রাতে ঘরে এসে সর্বশেষ নিউজফিড বা নোটিফিকেশন চেক করার সময় ছবি বা লাইভ ভিডিও বিক্ষোভকারীদের
দেখতে হচ্ছে। সর্বশেষ অনলাইনে প্রচার হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতের অন্ধকারে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বাড়িতে গিয়ে
বাসিন্দাদের বেরিয়ে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছে। বার্মিজ ভাষার একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে তারা বলছে, ‘কানার লিটে কে পার’ অর্থ ‘দয়া করে, কিছু সময়ের জন্য আমাদের সঙ্গে আসুন’। এটি দীর্ঘদিন সেনা শাসনে থাকা মিয়ানমারের একটি ঐতিহাসিক ভিন্ন মতাবলম্বী গ্রেফতার কৌশল।
আমার বাবা কোথায় : পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তুলে নেওয়ার পর অনেকের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তারা কোথায় আছে তা জানা যাচ্ছে না। ইনগাউ টাউনশিপ হাসপাতালের ডা. পিয়ে ফিও নাইংকে ১১ ফেব্র“য়ারি রাতে সাদা পোশাকে ৪ ও পুলিশের পোশাকে পাঁচজন এসে নিয়ে যায়। সে সময় তিনি এক রোগীর জখমের করছিলেন।
তিনি সেলাই শেষ করার সুযোগ চাইলেও সেটা দেওয়া হয়নি। ডা. পিয়ে ফিও নাইংয়ের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাকে টেনে ধরতে চাইলে আমাদের দিকে বন্দুক তাক করা হয়। তারা নিজেদের পদ-পরিচয় না দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। এখন সন্তাররা প্রশ্ন করছে আমাদের বাবা কোথায়?’
ব্যর্থ গ্রেফতার অভিযান : পুলিশ ও সেনারা যে সব সময় নিজেদের মনমতো ‘আসামি’ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা নয়। অনেক সময় তারা ব্যর্থ হচ্ছে। ১০ ফেব্র“য়ারি সাগাইং আঞ্চলিক রাজধানীর মনিওয়া এলাকায় সাদা পোশাকে দুই ব্যক্তি কো ঝাও থুরেইন তুনকে আটক করতে চাইলেও পারেনি।
তুন বলেন, ‘তারা বলেনি কেন আমাকে গ্রেফতার কনতে চায়। তবে আমার মনে হয় মনিওয়ার বিক্ষোভে আমি সব সময় সামনের কাতারে থাকার কারণে।’ অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে মহল্লাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে জান্তাকে। হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে মানুষ এসে গ্রেফতার-আটকে বাধা দিচ্ছেন।
দরজায় ঠক্ঠক্ করাঘাত : পুলিশ ও সেনা সদস্যরা সন্দেহভাজনদের দরজায় এসে ঠক্ঠক্ করে আওয়াজ দেয়। কলিং বেল চাপে। ১১ ফেব্র“য়ারি ইয়াঙ্গুনের ওক্কালাপা টাউনশিপে অ্যাস্ট্রোলোজার লি নিও তার ইয়ার এর বাড়িতে আসে। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান নেওয়ার কারণে তারা এটি করে।
তার বাবা বলেন, দুজন উর্দি পরা পোশাকসহ পাঁচজন আসে তার ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গ্রেফতার করতে হলে ভোর ৪টার পর আসতে হবে-এটি বলার পর সবাইকে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে লি নিওকে গাড়িতে তুলে নিয় যায় জান্তা বাহিনী। সূত্র : যুগান্তর