শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৬:৩২ সকাল
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৬:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তিন মাসে মেঘনার পেটে হাতিয়ার ১০ বিদ্যালয়

ডেস্ক রিপোর্ট: মেঘনার পানির তোড়ে সরে গেছে মাটি, আশপাশে দেখা দিয়েছে ফাটল, যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চানন্দি (নলেরচর) ইউনিয়নের জনতা বাজার বহুমুখী আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। একই রকম ঝুঁকিতে রয়েছে মেঘনা তীরের আরও দুটি বিদ্যালয় ভবন। এতে নদীর পানিতে ভেসে যাবে প্রায় ৯শ শিক্ষার্থীর শিক্ষার স্বপ্ন। একইভাবে গত সাত বছরে মেঘনা গিলে খেয়েছে অন্তত ১০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন।

স্থানীয়দের মতে, নদীতে বিলীন হয়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তেমনি ক্ষতির মুখে এ অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে স্থানীয়রা। আর এ ভবনগুলো ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ায় পানিতে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।

তাই সরকারিভাবে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা গেছে, জনতা বাজার বহুমুখী বিদ্যালয়ের ভবনের দক্ষিণ পাশের নিচের অংশের মাটি সরে গিয়ে মেঘনার বুকে ঢলেপড়েছে। ভবনের দেয়ালের চারপাশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বড় অংশ নিয়ে ফাটল ধরে আছে আশপাশের মাটিও। ভবনটি যে কোনো সময় মাটিসহ ভেঙে পড়তে পারে নদীতে। সে কারণে ভবনে থাকা আসবাপত্র আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নে নির্মাণ হয়েছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০টি পাকা ভবন। যেগুলো আবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। এগুলোর মধ্যে গত সাত বছরে চর বাসার, শেখ হাসিনা বাজার, আদর্শ গ্রাম, বাতানখালি, জয় বাজার, মুজিব বাজার, রেহানা বাজার, মসজিদ মার্কেট এম আলী, শাবনাজ বাজার হাজী গ্রাম ও কিল্লার বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয় কেন্দ্র ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও একই সময়ে নদীগর্ভে গিয়েছে প্রায় ১৫টি মসজিদ, ১০টি বাজার, ৩৭টি দাখিল, এবতেদায়ি ও নূরানী মাদ্রাসা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার। আর এ পরিবারগুলো বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোর সড়কের পাশে বসতি করে রয়েছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জনতা বাজারে নির্মিত হয় ‘জনতা বাজার বহুমুখী আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভবনটি। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস সরকার ও ইফাদের যৌথ অর্থায়নে চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-৪ (সিডিএসপি) দোতলায় ১০ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করে। মাত্র ছয় বছরে এ ভবনটি এখন নদীগর্ভে বিলীনের পথে। বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসের সময় বিদ্যালয়ে এ ভবনটিতে আশ্রয় নিত হাজার হাজার মানুষ। বাকি সময় এখানে বেসরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলত। কিন্তু কয়েক মাস আগে মেঘনার ভাঙনের মুখে পড়ে বিদ্যালয়টি। ভবনটি নদীতে তলিয়ে গেলে এলাকার তিন শতাধিক শিশু-শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন হবে।

শুধু জনতা বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নয়, মেঘনায় বিলীনের পথে রয়েছে ফরিদপুর বাজার ও হেমায়েতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। এতে করে শিক্ষাবঞ্চিত হবে এ দুই বিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক শিশু। এদিকে পাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যালয় থাকলেও পথের দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে।

ফরিদপুর বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, তার বিদ্যালয়ে মোট ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৬। করোনাকালীন বন্ধের আগে নিয়মিত চলছিল পাঠদান কার্যক্রম। কিন্তু গত কয়েক মাসে মেঘনা নদী বিদ্যালয় ভবনটির সন্নিকটে চলে এসেছে। যে কোনো সময় নদীতে ভেঙে পড়বে বিদ্যালয়টি।

শিশু শিক্ষার্থী মো. মামুন বলেন, সে জনতা বাজার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। যখনই মেঘনা নদী বিদ্যালয়টির সন্নিকটে চলে আসে তখন সে তার পরিবারের সঙ্গে চর আজমল গ্রামে চলে যায়। বর্তমানে সে স্থানীয় ভূমিহীন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়েছে। জনতা বাজার বিদ্যালয়ের তার অনেক সহপাঠী বিদ্যালয়টি ভেঙে যাবে এ কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে বলে জানায় মামুন।

হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভব রঞ্জন দাস জানান, জনতা বাজার বহুমুখীসহ যেসব বিদ্যালয় ভবন মেঘনার ভাঙনের মুখে রয়েছে সেগুলো থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে হেফাজতে রাখার জন্য পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ওই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ভেঙে পড়া বিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি অন্য কোনো জায়গায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয় করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালানোর ব্যবস্থা করতে পরিচালনা কমিটিকে বলা হয়েছে।হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোরশেদ জানান, আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ করছি। একনেকে থাকা বিলটি পাস হলে দ্রুত নদী ভাঙনের রোধে কাজ শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়