আহসান হাবিব : কতোজন পাঠক আপনার বইটি পড়লো, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনি কী লিখলেন। পাঠকের সংখ্যা দিয়ে একটি গ্রন্থ সবসময় বিচার্য নয়। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ কিংবা ‘খোয়াবনামার চেয়ে এদেশে অধিক পঠিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো বই। জীবনানন্দ দাশের চেয়ে নির্মলেন্দু গুণের কবিতা বেশি পড়েছে এদেশের পাঠক। এমন অজস্র উদাহরণ দেওয়া যাবে যেখানে পাঠকের সংখ্যা দিয়ে বইয়ের মান নির্ণয় করা যায় না। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হচ্ছে ধর্মের উপরে লেখা যেকোনো বই, সেটা হতে পারে ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ কিংবা ‘মোকসেদুল মোমেনিন’ নামের আবর্জনাগুলো। পৃথিবীতে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হচ্ছে ‘বাইবেল’ যার প্রথম লাইন হচ্ছে ‘আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন। অথচ বিশ বছরের অক্লান্ত গবেষণার ফসল ডারউইনের লেখা ‘অরিজিন অফ স্পেসিস’ কতোজন পাঠক পড়েছেন? পড়া তো দূরের কথা তার নাম নেওয়াও যে পাপ এমন আবহ সৃষ্টি করে রাখতে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
পৃথিবীতে কতো বই। সব বই কি টেকে? কাল পেরিয়ে কালজয়ী হয়? হয়, খুব অল্প বই। কেন হয়? হয়, কারণ এসব বই চিরকালিন মানবসত্য এবং বস্তুসত্য প্রকাশের শৈল্পিক দক্ষতা দেখিয়েছে। যুগে যুগে এসব বই মানুষ পাঠ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সুতরাং পাঠক নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি কী লিখছেন। আপনার লেখা বইটি যদি তেমন হয়, আজ কিংবা কাল আপনার বইটি খুঁজে নেবে। একজন লেখকের তাই প্রতিযোগিতা নিজের সঙ্গে, প্রতিনিয়ত।
কালকের আমিকে আজকের আমি দিয়ে অতিক্রম করে যাওয়াই লেখকের প্রধান চ্যালেঞ্জ। হয়তো দেখা গেলো আপনার লেখা মাস্টারপিসটি পাঠকের অগোচরে রয়ে গেলো বছরের পর বছর, হয়তো আপনি নেই তখন আপনার বইটি নিয়ে পাঠকরা মেতে উঠেছে পাঠে এবং আলোচনায়। দেখা যায় একটা বই ছাপিয়েই আপনি হতাশ হয়ে পড়েছেন কারণ বইয়ের পাঠক আপনার আশানুরূপ হয়নি। সব লেখকই ভেবে বসেন তার লেখাটিই সেরা। কিন্তু যখন দেখেন পাঠক নেই তখন আপনি পাঠকদের শাপশাপান্ত করতে থাকেন, তাদের সাংস্কৃতিক মান নিয়ে স্যাটায়ার করতে থাকেন। অথচ ঘুণাক্ষরেও নিজের লেখাটি কেমন তা বিবেচনা করেন না। সেটাই সর্ব প্রথম জরুরি।
আপনার লেখা পাঠ যোগ্য হলে পাঠক তা একদিন খুঁজে নেবে, এ আস্থা রেখে আজকের কিছু এবং আগামীর বহু পাঠকের পাঠ যোগ্য হয়ে উঠুন হে লেখকগণ। ফেসবুক থেকে মাসুদ হাসান
আপনার মতামত লিখুন :