মহসীন কবির: [২] নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি ছয় বিভাগে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হবে। এর পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সমাবেশ ও গণসংযোগের কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে রাজনীতির মাঠ সরগরম হওয়ার আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ইনকিলাব ও ইত্তেফাক
[৩] বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামমায় গ্রেফতার এবং সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশের সব মহানগর এবং জেলা শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।
[৪] রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ থাকবে না। বিশেষ করে ভোটাধিকার না থাকায় নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আসা না আসা নিয়ে চিরাচরিত নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে। এখন সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে যে অবিশ্বাস তাতে আলোচনার পথ অনেকটাই রুদ্ধ বলা যায়। রাজনীতির যে কোনো বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাজপথেই এর সমাধান হয়, এটাই সব সময় দেখা যায়।
[৫] রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে চরম সঙ্কটের তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে নির্বাচন কমিশন জড়িয়ে পড়েছে। তাদের নৈতিক স্খলন হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায়ে মানুষ যে কোনো সময় রাজপথে নামতে পারে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ময়দান যে কোনো সময় সরগরম হতে পারে।
[৬] নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। তাই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা চট্টগ্রামে সমাবেশ কররে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যালট প্যানেলের সুরক্ষা ছিল না। ব্যালট প্যানেল দখল করে ভোট চুরি করা হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ ভোট নিজেরা দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছেন।
[৭] গত ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি মনোনীত দেশের ছয় মহানগরের সাবেক মেয়র প্রার্থীদের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছয় মহানগরে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে, ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে, ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায়, ১ মার্চ রাজশাহীতে, ৩ মার্চ ঢাকা উত্তরে ও ৪ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী শনিবার দুপুর দুইটায় নগরের লালদীঘির পাড় অথবা কাজীর দেউড়ীর মোড়ে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
[৮] বিএনপির এই তৎপরতার পরপরই সেদিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিলো নগর আওয়ামী লীগ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীন।
তিনি বলেন, বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যদি কোনো অপকর্ম করতে চায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সব স্তরের জনগণকে নিয়ে রাজপথে থেকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। আমাদের আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এক এবং অভিন্ন।
[৯] অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে দেশব্যাপী সমাবেশ ও গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের সব শাখা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ কর্মসূচি শুরু করবে। দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা স্ব স্ব বিভাগের কর্মসূচি সমন্বয় করবেন।
[১০] বিএনপি ঘোষিত কর্মস‚চির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির এ সমাবেশের কর্মসূচি দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশের বিরাজমান স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিনষ্টের যে কোনো অপপ্রয়াস আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ বলেন, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বা ইস্যু নেই যে, বিএনপিকে আন্দোলন করতে হবে। যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। কিন্তু সমাবেশের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শক্ত হাতে তা দমন করা হবে।
[১১] শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠে নামার ঘোষণায় দলের কথার লড়াই গড়াচ্ছে রাজনীতির মাঠে। সাফ ঘোষণা রাজনীতির মাঠে হার্ডলাইনে থাকবে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। বিএনপির কর্মসূচিতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। একচুল পরিমাণও ছাড় দেওয়া হবে না।
[১২] বিএনপির ডাকা সভা-সমাবেশকে শক্ত হাতে দমন করার হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দিয়েছেন। এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলছেন, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনরোষের ভয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ঘরে বসে হুঙ্কার দিচ্ছেন। বিএনপির সমাবেশের কথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছেন। আপনাদের জারিজুরি সব ক্রমাগতভাবে ফাঁস হচ্ছে। জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে- বর্তমান শাসন সম্পূর্ণরূপে গণতন্ত্র বিবর্জিত এবং মাফিয়াদের দ্বারা পরিচালিত। গণতান্ত্রিক অধিকার হচ্ছে সভা-সমাবেশ করা। আর সেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করার হুমকি কোনো রাজনৈতিক নেতা দিতে পারেন না, সেটি শুধু মাফিয়ারাই দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :