ডেস্ক রিপোর্ট: বিপজ্জনক বিস্ফোরকের স্তূপ জমে আছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে। বছরের পর বছর ধরে এসবের মজুদ থাকায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বন্দরগুলো। এসব বস্তুর স্তূপ সরানোও যাচ্ছেনা নানা জটিলতার কারণে। সম্প্রতি লেবানন বন্দরের মতো যাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ দুর্ঘটনার মতো কিছু না ঘটে- সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত যে কোন ঝুঁকি এড়াতে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য ধ্বংস বা নিলাম দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুরান ঢাকা থেকে অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনগুলোও আবারও দ্রুত সময়ের মধ্যে সরাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও বিস্ফোরক মজুদ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। বৈঠকে কাস্টমস আইনের ১৯৬৯ ধারাও সংশোধন করার জোরালো দাবি ওঠেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে দেশে বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুরান ঢাকার বিদ্যমান কেমিক্যাল গোডাউন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সাময়িক বা অস্থায়ীভাবে সীমিত সময়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি পর্যালোচনা ও সব ধরনের বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্যের সঠিক নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবস্থাপনা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়-স্থল, বিমানবন্দর, নদী বন্দরসহ যেসব স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ বিস্ফোরক মজুদ আছে সেগুলো চলতি মাসের মধ্যে সরাতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক সদস্য জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পি শেডে দীর্ঘদিন ধরে (১৯১০-২০২০ সাল পর্যন্ত) ১১৪টি লটের পণ্য চালান জমা হয়। এখনও ৫১টি লটের চালান খালাস করার বাকি আছে। এসব পণ্য নিলামে তুলতে হবে বা ধ্বংস করতে হবে। তাছাড়া কমলাপুর আইসিডি, বেনাপোল, মংলা ও পাঁনগাও কাস্টমস হাউসগুলোতে রক্ষিত দাহ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে। যেসব বিস্ফোরক এখনও পড়ে আছে সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাবান্ধা স্থল কাস্টমস স্টেশনে ৭ দশমিক ৬ মেট্টিক টন পণ্য ধ্বংস করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা যানবাহনগুলো সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যগুলো দ্রুত সরাতে কাস্টমস আইনের ১৯৬৯ ধারা সংশোধন করতে হবে। বিমানবন্দরে বেশিরভাগ গার্মেন্টসের কাঁচামাল সংরক্ষিত থাকে। বেসরকারী ওয়্যারহাউস নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। তাছাড়া নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঝুঁকির ধরন বিবেচনায় ৯ ধরনের পণ্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কারিগরি নির্দেশনার কথা তুলে ধরে আরও জানানো হয়-বিপজ্জনক পণ্য পৃথক ওয়্যারহাউসে মজুদ থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান বলেছেন, কাস্টমস আইনের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে দ্রুত না সরালে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। এখানে মালিকানাবিহীন ৩১২টি গাড়ি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এসব গাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলো দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরে ৪৩৮টি গাড়ির মালিকের হদিস নেই। এগুলো দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা নিলে সবাই উপকৃত হবে। আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল খালাস করছে না। এই জন্য আমরা তদারকি করছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, সিন্ডিকেটের প্রভাবে কাস্টমসের নিলামে কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাইরের কেউ অংশ নিতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী।
ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই বৈঠকে বিস্ফোর দ্রব্যগুলো নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরসহ যেসব স্থানে বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ করা আছে সেগুলো ধ্বংস করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আটটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে। ৮টি বন্দরে যেসব গাড়ি স্তূপ হয়ে আছে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য বা রাসায়নিক আমদানির লাইসেন্সকৃত মালামাল সরাতে হবে। -জনকণ্ঠ