কাজল ঘোষ : প্রায় ছয় মিনিট করতালি ধ্বনি দিয়ে পুরো জার্মানি বিদায় জানালো এঙ্গেলা মেরকেলকে কদিন আগে। যাকে আঠারো বছর আগে জার্মানির মানুষ বেছে নিয়েছিলো তাদের নেত্রী হিসেবে। বিনিময়ে মেরকেল জার্মানির আট কোটি মানুষকে উপহার দিয়ে গেলেন সুশাসন, অর্থনৈতিক বিকাশ, উন্নত জীবন আর নিরাপত্তা। গত আঠারো বছরে জার্মানিতে তার বিরুদ্ধে একটিও অনৈতিক কাজের অভিযোগ ওঠেনি। একটিও স্বজন পোষণের অভিযোগ নেই। এই আঠারো বছরে তিনি একবারের জন্যও টিভিতে বা কোনো জনসভায় নিজের কৃতিত্ব দাবি করেননি।
তার ছবি আর বাণী নিয়ে জার্মানির কোনো রাস্তায় কখনো মিছিলো বার হয়নি। কারণ শাসন ক্ষমতা জিইয়ে রাখবার জন্য তিনি সশস্ত্র হারমাদ বাহিনী তৈরি করেননি। কারণ আত্মপ্রচার করবার শিক্ষা তার ছিলো না। বিরোধীরা নির্ভয়ে তার বিরোধিতা করেছেন। কারণ তাদের ওপর মেরকেল পুলিশ আর গুন্ডা লেলিয়ে দেননি।
তার মুখে মানুষ কখনো হাস্যকর, নির্বোধের মতো কথাবার্তা শোনেনি। মানুষকে তিনি মিথ্যা আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দেননি। উন্নতির মিথ্যা খতিয়ান দেননি। বার্লিনের রাস্তায় তিনি নিজের এবং দলের প্রচারের জন্য একটি ছবিও তোলাননি। বিরোধী নেতাদের চরিত্র হনন করেননি। এঙ্গেলা মেরকেলকে বিশ্ব চেনে Ôladz of the world’ নামে। বলা হয়, তিনি একাই ষাট লক্ষ পুরুষের সমান। জার্মানি এবং তার নাগরিকদের উন্নতির শিখরে রেখে এঙ্গেলা মেরকেল নিঃশব্দে সরে দাঁড়ালেন,পরবর্তী নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা সপে দিয়ে। তার বিদায়কালে মানুষ যেভাবে আবেগতাড়িত হয়েছেন, জার্মানির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন।
সারা জার্মানি জুড়ে মানুষ বাড়ির ব্যালকনিতে এসে প্রায় ছয় মিনিট ধরে তাকে হাততালি দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন। কেউ তার নামে কবিতা লিখে ছাপায়নি। কোনো চিত্রকর ছবি এঁকে তার প্রচার করেনি। তবুও মানুষ আবেগে ভেসে গিয়েছেন। সমস্ত জার্মানি এক হয়ে দাঁড়িয়ে, ভেদাভেদ ভুলে, তাদের নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছেন, এমনই সভ্য জাতি।
মেরকেল পূর্ব জার্মানির মানুষ। অনাড়ম্বর সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ক্ষমতার শিখরে থেকেও তার জীবন অনাড়ম্বরই ছিলো। একটি সাধারণ নিজস্ব গাড়ি ছাড়া তার ব্যক্তিগত প্লেন, ইয়ট এমনকি বিলাসবহুল কোনো অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি নেই। অন্যান্য ছাপোষা জার্মান নাগরিকের মতো তিনি একটি অতি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, রাজনীতিতে আসবার আগে থেকেই। অবিশ্বাস্য শোনালেও মেরকেলকে মানুষ একই পোশাকে আঠারো বছর ধরে দেখে এসেছে। একটি প্রেস কনফারেন্সে একজন মহিলা সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, তার কি অন্য স্যুট নেই। মেরকেল উত্তরে বলেছিলেন, তিনি রাজনীতিবিদ, মডেল নন।
অন্য একটি সম্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চান, তিনি এতো ব্যস্ত, তার বাড়ির কাজ কে করেন? তার বাড়িতে কাজের লোক, রান্নার লোক আছে কিনা। উত্তরে মেরকেল জানান, তার বাড়িতে একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ কাজের লোক আছেন। মহিলাটি তিনি নিজে এবং পুরুষটি তার স্বামী। সাংবাদিকেরা মজা করে জানতে চান, কাপড় জামা কে ধোয়? তিনি না তার স্বামী? মেরকেল জানান, তিনি কাপড় জামা ওয়াশিং মেশিনে ঢোকান। সাবানের গুড়ো ঢেলে দেন।
তার স্বামী মেশিন চালান। তারা রাতে ওয়াশিং মেশিন চালান। কারণ এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। এরপর সাংবাদিকদের তিনি জানান, তিনি আশা করবেন এসব অবান্তর প্রশ্ন না করে সংবাদমাধ্যম যেন তার সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করে। তিনিই এঙ্গেলা মেরকেল। ইউরোপের সব থেকে শক্তিশালী অর্থনীতির চালিকা। ধন্য জার্মানি, ধন্য এসব দেশের মানুষ আর তাদের নেতা নেত্রী। লেখাটি সংগৃহীত। ফেসবুক থেকে