যায়নুদ্দিন সানী: ফেসবুকের এই পোলারাইজড জগতে, ইউ বিলিভ হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু বিলিভ। আপনি যতই চেষ্টা করেন, অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করাতে পারবেন না, ‘ইউ আর রং'। ফলে যা ঘটেছে তা হচ্ছে ফেসবুকের বাঙ্গালি সমাজ মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী আর অ্যান্টি আওয়ামী। মাঝে দুধভাত টাইপ একটা দল আছে, বামপন্থী। এরা সংখ্যায় কম হলেও সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস প্রাপ্ত এবং মাঝে মাঝেই এরা দল চেঞ্জ করে। অবস্থা বুঝে কখনো আওয়ামী ক্যাম্পে, কখনও অ্যান্টি আওয়ামী ক্যাম্পের হয়ে ব্যাটিং করে।
সাংবাদিক আর সম্পাদক বাহিনীও কমবেশি একই বিভক্তির শিকার। সেটা খুব বড় আলোচনার বিষয় না। তবে কিছু কিছু সম্পাদককে ধরে নেয়া হয়, এদের দলবাজি করার দরকার নেই। যেহেতু পেটে বিদ্যা আছে, তাই কোন ক্যাম্পে নাম লেখালেও এদের ভাতের অভাব হবে না। ধারণাটা হয়তো ভুল। সরকারী অ্যাড আ পেলে কমবেশি সব পত্রিকার ইনকামে খরা দেখা দেবে, তারপরেও, এরই মাঝে অনেকে লেজুড় বৃত্তি না করে চালিয়ে নিচ্ছেন।
ঠিক এমন যখন পরিস্থিতি, সেই সময়ে বাজারে আমদানি হয় আলো জাজিরার ডকুমেন্টরি। নো ডাউট, ইট ইজ আ সুপার হিট রিপোর্ট। প্রশ্ন হচ্ছে, অথেনটিক কি না। এখানেই দেখা দিয়েছে পোলারাইজেশান। যারা বিশ্বাস করেন, ইহা অক্ষরে অক্ষরে সত্য, তাঁরা যথারীতি নেমে পড়েছেন ফেসবুকে। বক্তব্যের সারাংশ, ‘ছি ছি’। আর যারা বিশ্বাস করেননা, তাঁদের বক্তব্যও কমবেশি, ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে'র আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।
এমন সময় সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বেশ মজার একটা পজিশান নিয়েছেন। ঠিক আর বেঠিকের বাইরে নতুন একটা ঘরানা তৈরি করতে চেয়েছেন-- ‘দুর্বল ইনভেস্টিগেং জার্নালিজম’ ঘরানার। এই মুহূর্তে সেই ঘরানার সদস্য দুইজন। তিনি আর মাহফুজ আনাম।
সম্প্রতি খালেদ মুহিউদ্দিন পরিচালিত টক শোতে, নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিলের সাথে বিতর্কে নেমে এই ঘরানা সম্প্রসারণের একটা চেষ্টা নেন। আরএসব টক শো তে যেমনটা হয়, কিছুক্ষণের ভেতরেই আলোচনা চিৎকার চেঁচামেচিতে পরিণত হয়, এখানেও সেটা হয়ে যায়। এবং তিনিও আর ব্যাখ্যা করতে পারেননি, 'দুর্বল ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিজম' কি। ফলাফল? ‘এই ব্যাটা আগে ভালোই ছিল কিন্তু এখন পুরাই লীগ হয়ে গেছে’ তকমা নিয়ে ফেরত এসেছেন।
দ্যাট’স হিস প্রবলেম। এবার শুরু হচ্ছে, আমার ইন্টারপ্রিটেশান। আমি যতটা বুঝেছি, তাতে নাইম সাহেব বলতে চেয়েছেন, রিপোর্টের মধ্যে স্টোরি আছে কিছু সেই স্টোরির পক্ষে প্রমাণ নেই। হারিস সাহেবের বক্তব্যগুলোকে সেই অর্থে প্রমাণ বলা যায় না। বাকি যেসব তথ্য, অর্থাৎ জোসেফের ক্ষমা পাওয়া কিংবা ২০১৯ এর নির্বাচন কিংবা ইন্টারসেপ্টার কেনা এসব জানা তথ্য। নতুন কোন আবিষ্কার না। তাই এই রিপোর্টকে দারুণ বলছি না, অন্তত সাংবাদিকতার দৃষ্টিতে। হ্যাঁ, মেকিং বা ড্রামাটাইজেশান ইজ গুড।
পুরো ঘটনায় যেখানে তিনি মার খেয়েছেন, তা হচ্ছে পারসেপশান ব্যাটেলে। ঘটনা আসলে কি, তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, ব্যাপারটা নিয়ে পাবলিক কি ভাবছে। তিনি যে যুক্তি সাথে নিয়ে রিপোর্টের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন তা পাবলিককে বোঝানো খুব সোজা ব্যাপার না। বিশেষ করে এই পোলারাজড পরিবেশে। একজনের বিশ্বাসকে টেনে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার এই অসম্ভব প্রচেষ্টায় তিনি স্বার্থক হবেন কি না, পাবলিক 'সবল ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিজম’ আর ‘দুর্বল ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিজম’ এর পার্থক্য বুঝতে পারবে কি না, সেটা হয়তো সময় বলে দেবে।
এনিওয়ে, রিপোর্টটা ঠিক না বেঠিক, তার চেয়ে পাবলিক অনেক বেশি উৎসাহী, এই রিপোর্টের ফলে রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কি না। ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে ষড়যন্ত্র তত্ব দিয়ে আওয়ামী ক্যাম্প আল জাজিরার বিরোধিতা করছে, তেমন কোন ষড়যন্ত্র সফল হবে কি না? এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, আওয়ামী সরকারের তেমন কোন সমস্যা হবে না। এটা অ্যান্টি আওয়ামী ক্যাম্পও জানে। বরং অ্যান্টি আওয়ামী ক্যাম্প তাকিয়ে আছে আজিজ সাহেবের আমেরিকা ভিজিটের দিকে। প্রত্যাশা, যদি ওখান থেকে কোন ফলাফল আসে। বারো তারিখে উনি ফিরে আসছেন।
এবং তখন যে প্রশ্নের উত্তরের জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করবে, সেই মিলিয়ন ডলার কোয়েসচেন ইজ, হোয়াট নেক্সট।