স্বকৃত নোমান : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পারবে, আমরা কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। অচিন্তনীয় সব কাণ্ড-কারখানা ঘটে চলেছে। কাউন্সিলর বাদল জামায়াত-বিএনপি বা অন্য কোনো মৌলবাদী দলের নেতা নন, তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তার আরো একটি পরিচয় আছে, তিনি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা।
গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মানে হচ্ছে, স্বাধীনতা দিবসে গানবাজনা চলবে না, বিজয় দিবসে চলবে না, ভাষা দিবসেও চলবে না, পয়লা বৈশাখে তো প্রশ্নই আসে না। হায় বাংলাদেশ! একদিন এ দেশের মানুষ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসংগীত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এখন পাকিস্তানি শাসক নেই। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। অথচ শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়, সকল ধরনের সংগীত নিষিদ্ধ করছে এ দেশেরই মানুষ। কী দুষ্কাল। কী ভয়াবহ দুষ্কাল!
সিদ্ধিরগঞ্জ টেস্ট কেস। এখানে গান-বাজনা বন্ধে সফল হলে ধীরে ধীরে সারাদেশে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। মানুষকে চারদিক থেকে অবদমনের মধ্যে রাখতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না। আনন্দ-উল্লাস করতে দেওয়া যাবে না। নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার স্বাভাবিক বিকাশ রুদ্ধ করে দিতে হবে। শিল্প-সংস্কৃতি ভুলিয়ে দিয়ে তাকে যন্ত্রমানবী সোফিয়ার মতো রোবট বানিয়ে তুলতে হবে। ধর্ম ও রাজনীতির বাইরে সেই রোবট আর কিচ্ছু বুঝবে না, আর কিচ্ছু বলবে না।
এ এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এই ঘটনার প্রতিবাদ করা বাংলাদেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের উচিত নয় কী? প্রতিবাদ করে কি প্রতিকার পাওয়া যাবে? তবু একজন নগণ্য নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম।