বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত “মিডওয়াইফ”মা ও নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে শত বছর কিংবা তার থেকেও পুরোনো ও প্রচলিত। বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মিডওয়াইফ পেশাটি ২০১০ সালে স্বীকৃতি ও পরিচিতি লাভ করে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস) মিডওয়াইফদের প্রফেশনাল এসোসিয়েশন হিসেবে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে বিএমএস এর ২৯৪৯ জন সাধারণ সদস্য রয়েছে।মিডওয়াইফ হলো দক্ষ প্রশিক্ষিত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন মা গর্ভধারণের পর থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব পরবর্তী ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন মিডওয়াইফের সার্বিক তত্ত¦াবধায়নে থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করবেন। নরমাল ডেলিভারী, গর্ভ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা মিডওয়াইফারি সেবার আওতাভূক্ত ।বংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু আছে। উল্লেখ্য, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স কারিকুলাম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, সম্পূর্ণ ইংলিশ এবং International Confederation of Midwives (ICM) standard অনুযায়ী তৈরী।
“মিডওয়াইফ” হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-
প্রতি বছর বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কাউন্সিল (বিএনএমসি) ‘ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি’ কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে একজন শিক্ষার্থীর যেসব শর্তাবলীর অধীনে আবেদন করতে হয় তা হলো- এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে নুন্যতম ২.৫ ও ২.৫ জিপিএ প্রাপ্ত (দুটি মিলিয়ে জিপিএ ৬ এর কম নয়), এইচ.এস.সি পাশের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে যেমন মেডিকেল/ ইউনিভার্সিটি বা অন্যান্য উচ্চ শিক্ষার সমনিয়ম এবং অবিবাহিত হতে হবে।
ভতির্ পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ন হয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ৩ বৎসরে ৬ সেমিষ্টার ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করতে হয় এবং পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ICM Standard Curriculum অনুসারে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে অভিজ্ঞ গাইনিকনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার ও দক্ষ নার্সিং টিউটর দ্বারা হাতে কলমে ক্লিনিকাল প্রাকটিস করানো হয়। এমনকি হাসপাতালে বেড সাইড পরীক্ষা নেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক মিডওয়াইফ বি,এন,এম,সি রেজিষ্ট্রেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লাইসেন্স গ্রহণ করেই সরকারি ভাবে প্রাকটিস করার অনুমতি পান। যদিও মিডওয়াইফদের এখনও পর্যন্ত প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি নেই।
বর্তমানে তিন বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রায় ১১৪৯ জন নিবন্ধিত মিডওয়াইফ দেশের বিভিন্ন উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাবসেন্টার গুলোতে কর্মরত আছেন । সেই সাথে আরো প্রায় ৩০০০ জন নিবন্ধিত মিডওয়াইফ সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষমান, কেউ বেকার কেউ বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে মিডওয়াইফ সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস পেনডেমিকের মধ্যেও মিডওয়াইফগণ অপ্রয়োজনীয় সিজার থেকে সুরক্ষা, নরমাল ডেলিভারী বৃদ্ধি এবং মার্তৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে অত্যন্ত সাফল্য ও তাৎপর্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। মিডওয়াইফদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিএসসি অনার্স ও মাস্টারস কারিকুলাম তৈরী হচ্ছে।
অন্য দিকে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাগণ এস এস সি পাস করে বাংলায় ১৮ মাসের প্রশিক্ষণের পর কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করে থাকেন।পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাগণদের মিডওয়াইফ সম-মান দেওয়ার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ১১ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, এই পেশার পরিবর্ধন ও মানসুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সকল মিডওয়াইফদের পক্ষ থেকে, আমরা বাংলাদেশ মিডওয়াইফেরি সোসাইটি (বিএমএস) স্বাস্থ্য সম্পৃক্ত সকল দ্বায়িত্ববান মহলের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাগণদের মিডওয়াইফ সম-মান দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপ দ্রƒত বন্ধে আমাদের সহায়তা করুন। অন্যথায় বাংলাদেশে মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নের নির্ধারিথ লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বাধা সৃষ্টি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :