শরিফুল হাসান : বাবা দিনমজুরি আর ভাই মুদি দোকান করে সংসার চালিয়ে যা থাকে, তার সঙ্গে যুক্ত করতে হয় মায়ের মুরগির ডিম বিক্রির টাকাও। তাতেও চলতে পারতেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র আবু বকর। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় কারও কৃষিখেতে কাজ করে, কারও বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন। এতো সংকটের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হচ্ছিলেন। স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবেন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নির্মম বলি হয়ে ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিতে হয় তাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন আবু বকর। সেদিন ওই হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ঘটে। এরপর পুলিশ আসে। টিয়ারশেলের আঘাতে মারা যান রাজনীতি থেকে দূরে থাকা বকর। ওই ঘটনার ১১ বছর পেরুলো। অথচ জড়িত কারও শাস্তি হয়নি। আবু বকরের মৃত্যুর সময় আমি প্রথম আলোর রিপোর্টার ছিলাম।
ঘটনার পর তার পরিবারসহ বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওইদিন এ ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর লিড নিউজটা আমার করা। পাশাপাশি একটা বিশেষ নিউজ করি যার শিরোনাম ছিলো, ঘামঝরা জীবন, রক্তে ভিজে শেষ। ওই ঘটনার পর বকেরর বন্ধুদের কাছ থেকে একটি নোটখাতা পেয়েছিলাম যেটি বকরের শরীরের রক্ত ভিজে গিয়েছিলো। সেই খাতায় ছয়টি প্রশ্নের উত্তর লেখা। এরপর লেখা শুধু ‘প্রশ্ন:’।
কী ছিল সেই প্রশ্ন? অনেক উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। প্রতীকিভাবে হলেও কখনো কখনো মনে হয়েছে এই দেশের দলীয় ও ছাত্ররাজনীতিকেই হয়তো প্রশ্ন করে গেছেন বকর। হয়তো প্রশ্ন করে গেছেন দেশের শিক্ষাব্যাবস্থাকে যেখানে একজন সাধারণ ছাত্র লেখাপড়া করতে এসে প্রাণ হারায়। হারিয়ে যায় একটি দরিদ্র পরিবারের সব স্বপ্ন। হয়তো আমাদের গোটা রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করেছিলো। হয়তো আজীবন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। শুধু একটি চাওয়া, আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। ফেসবুক থেকে