দীপক চৌধুরী: কোবিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে নানা বিতর্ক করানো হচ্ছে। শুরুতে আলোচনায় সন্দেহ ছিল, এই ভ্যাকসিন আসবে কি আসবে না? এলে পরে এত দাম হলো কেন? এটা চলবে কি চলবে না? এরপর সেই সন্দেহে যুক্ত হয়, ভ্যাকসিন শরীরে দিলে কী হবে? যাই হোক তবু তবু ভ্যাকসিন এসেছে। ভারত সরকার সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তারা ভ্যাকসিন দিয়েছে। আমরা শুরু করেছি কাজ। বাংলাদেশের আওয়ামী-বিরোধীদলগুলো এটি নিয়ে দস্তুর মতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। টার্গেট সাধারণ মানুষ। মানুষের মনের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে ‘রাজনীতি’ করার নামে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে তারা। এখন ‘আইটির’ যুগ। সারাবিশ্ব এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিব্রত। বিএনপি ও সমমনাদলগুলোর একটাই ভাবনা কীভাবে ‘টিকা’ ইস্যুতে সরকারকে জব্দ করা যায়! ভাবতে অবাক লাগে সবক্ষেত্রেই কেন রাজনীতি ঢুকিয়ে বিএনপি নামের দলটি এখন ‘রসাতলে’ গেছে। আমরা, সচেতন মানুষেরা ভালো করেই জানি, দেশে ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের অপপ্রচার রয়েছে। যাতে শুরুতে অনেকে ভ্যাকসিন গ্রহণে সাধারণের মধ্যে ভীতি দূর করা যায় এজন্য চিকিৎসক এবং সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মরতাদেরও ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। টেলিভিশনের সুবাদে ভিডিও কনফারেন্সে গতকাল (বুধবার) দেখলাম, রেনু ভেরোনিকা কস্তা, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এক সেবিকা। সংবাদপত্র টেলিভিশন সবখানে গত কয়েকদিন আলোচনায় ছিলেন এই একজন সেবিকা প্রথম করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন। তিনি এখন সবার কাছেই পরিচিত এক নাম। দেশের প্রথম করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের পর এক গাল হেসে তিনি বলেছেন ‘জয় বাংলা’। বুধবার প্রথম টিকা পাওয়া বাকি চারজন হলেন, এ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল বিভাগের ট্রফিক পুলিশ সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর সবাই জয়বাংলা স্লোগান দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যে কিছু কিছু লোক থাকে, সবকিছুতেই একটা নেতিবাচক মনোভাব তারা পোষণ করে। যতই ভালো কাজ করেন, সবসময় তাদের কিছু ভালো লাগে না। এরকম ‘ভালো না লাগা’ রোগে ভোগে তারা। এ রোগের কী চিকিৎসা আছে আমি জানি না। তিনি বলেন, যারা অহেতুক সবকিছুর সমালোচনা করে তাদের কাছে মানুষ কোনো সাহায্য পায় না। কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলে সেটি নিয়ে বিরূপ সমালোচনা, মানুষের ভেতরে সন্দেহ ঢোকানো, মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো; এ ধরনের কিছু কাজ কারও অ্যভাস আছে। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকে ঘিরে সারাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এখন সরকারের হাতে প্রায় ৭০ লাখ ভ্যাকসিন রয়েছে। আগামী মাসের যে কোন সময় আরও ৫০ লাখ ভ্যাকসিন চলে আসবে। দক্ষিণ এশিয়াতো বটেই এশিয়ার অনেক দেশই শুরুতেই এত বিপুল ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সরকার বলছে বিধিনিষেধ নেই এমন সব মানুষেকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। আপাতত দেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগের গাইড লাইন তৈরি করেছে সরকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক