আশরাফ আহমেদ: [২] কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হোসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজের বিএসএস শাখার ছাত্রী সীমা আক্তার ২০১৭ সালের ডিগ্রী পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। সে উপজেলার দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের চাঁন মিয়া ও মাতা রুকুন্নাহারের কন্যা। সাত ভাই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। বাবা কৃষিকাজ করেন।
[৩] অভাবের সংসার। অনেক আর্থিক সংকট ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে। মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় স্বাধীনভাবে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। তবুও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এতোদূর এগিয়ে এসেছে সীমা। তার বড় দুই বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। হোসেনপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে ৪.৫ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল অনার্স কোর্সে ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করবে কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা হেতু অনার্সে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাবার ইচ্ছে পূরণে হোসেনপুর সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রী (পাস) কোর্সে আওতায় বিএসএস শাখায় ভর্তি হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০১৭, বিগত ২০১৮ সালে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৯ সালে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে । এতে সীমা আক্তার সিজিপিএ ৪এর মধ্যে ৩.৭৫ অর্জন করেছে।
[৪] জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোনে তাকে জানানো হয়, সে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। মা বাবা ও শিক্ষকগণকে তার এই সাফল্যের কথা জানান।
[৫] সীমার সহপাঠী সোনিয়া খানম বলেন, সীমা পড়াশোনা নিয়ে খুবই সিরিয়াস ছিলো। আমরা সহপাঠী হিসেবে তাকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করতাম।
[৬] তার শিক্ষক অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আশরাফ আহমেদ জানান, সে নিয়মিত ছাত্রী ও পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সে এতো ভালো রেজাল্ট করায় আমরাও খুবই আনন্দিত।
[৭] তার সাফল্যে মা-বাবা জানান, আমাদের মাইয়া হারারাত জাইগ্যা লেহাপড়া করত। দীর্ঘ রাস্তা পায়ে হাইট্যা প্রতিদিন কলেজে যাইত। তার সবচাওয়া সবসময় পূরণ করতে পারি নাই।
[৮] কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান জানান, সে কলেজে নিয়মিত একজন ছাত্রী। দীর্ঘ ১০ কি:মি: রাস্তা প্রতিদিন হেঁটে এসে সীমা ক্লাস করেছে। তার এই সাফল্যে শিক্ষকপর্ষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদসহ আমরা খুবই আনন্দিত।
[৯] সীমা আক্তার বলেন, মা-বাবা ও বড় বোনদের অবদানে এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। এ ছাড়াও কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশনা মোতাবেক অধ্যয়ন করায়, এতো ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চায় বলে সে জানায়। সম্পাদনা: হ্যাপি