রাশিদ রিয়াজ : কোভিড মহামারীতে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার পর দুই দশকে এই প্রথমবার দেশটিতে কমেছে পেট্রোলের চাহিদা। গত বছর এর আগের বছরের তুলনায় পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসোলিন ও জেট ফুয়েলের চাহিদা কমেছে ১০.৮ শতাংশ। গত বছর মোট ১৯৩ কোটি ৪০ লাখ টন পেট্রোল ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ব্যবহার হয়েছে ভারতে। সে হিসেবেও গত পাঁচ বছরে এই প্রথমবার ভারতে এত কম পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে। এশিয়ায় যে দেশগুলি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জ্বালানি আমদানি করে, তাদের মধ্যে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। গতবছর মার্চের শেষে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে ভারতে জ্বালানির চাহিদা আচমকা ৭০ শতাংশ কমে যায়। অয়েল প্রাইস ডটকম
চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু’টি ত্রৈমাসিকে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন সংকুচিত হয়েছে। ফলে সরকারিভাবে মন্দার কবলে পড়েছে দেশটি। তবে প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সংকোচন হয়েছে কম। প্রথম ত্রৈমাসিকে লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আনলক পর্ব শুরু হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফলে জিডিপির সংকোচন হয়েছে কম হারে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, ডিসেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচনের হার আরও কমবে। তখন মোট জাতীয় উৎপাদন সংকুচিত হবে তিন শতাংশ। আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে জিডিপি সংকুচিত হবে ০.৫ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে ২০২০-২১ সালের আর্থিক বছরে অর্থনীতি সংকুচিত হবে সম্ভবত ৮.৭ শতাংশ। সেক্ষত্রে ধরে নিতে হবে গত চার দশকে চলতি আর্থিক বছরেই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতির।
লকডাউনের ফলে ভারতে হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বিরাট সংকটে পড়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। ইতিমধ্যে দেশটিদে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৬ হাজার ৩১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে ১১ জানুয়ারি, সকাল ৮টা পর্যন্ত ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৫ জন। বুলেটিন জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ১৬০ জন। ভারতে করোনায় মৃত্যুহার ১.৪৪ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে ১৬ জানুয়ারি থেকে দেওয়া শুরু হচ্ছে ভ্যাকসিন। এর ফলে আগামী দিনে অতিমহামারীর প্রভাব কাটিয়ে বাজার চাঙ্গা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয় মূলত পুরনো হয়ে যাওয়া কূপ থেকে, যে কূপগুলিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন কমে আসে। নতুন তেলক্ষেত্র আবিষ্কারে ভারতের ঘাটতি এবং যেসব কূপ আবিষ্কৃত হয়েছে সেখানে উৎপাদনে বিলম্ব। এরফলে ভারত ক্রমশ তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পুরনো কূপগুলের থেকে তেলের উৎপাদনহ্রাস দ্রুতগতিতে কমছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় যে সব কোম্পানি তেল অনুসন্ধান করে, তারা বর্তমান কূপগুলি যাতে আরও বেশিদিন সক্রিয় থাকে তার খোঁজ করছেন।
ভারতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের সিংহভাগ করে ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া। অপরিশোধিত তেলের ব্লকের নিলামে এরাই মূল বিডার এবং ভারতে যত ব্লতের নিলাম হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত এরাই তার সিংহভাগের দায়িত্ব পেয়ে থাকে। কেয়ার্ন ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির মত বেসরকারি সংস্থা, বিশেষত যারা বিদেশি কোম্পানি, তাদের ভারতে তেল অনুসন্ধান ও উৎপাদনে অনীহা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এর কারণ একটি তেলক্ষেত্র বরাদ্দ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে কাজ শুরুর অনুমোদন পেতে দীর্ঘ বিলম্ব। উৎপাদন শুরুর জন্য বেশ কিছু জরুরি অনুমোদন প্রয়োজন, এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র এবং ডিরেক্টর জেনার অফ হাইড্রোকার্বনসের অনুমোদন। তার আগে বরাদ্দপ্রাপ্ত সংস্থাকে ভূকম্পন জনিত সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হয় ও একটি ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা করতে হয়। ভারতে সাধারণত বরাদ্দ হওয়ার পর উৎপাদন শুরু করতে অন্তত ৫-৭ বছর সময় লেগে যায়, সরকারি সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে এই দেরির পরিমাণ আরও বেশি।