শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:০৩ সকাল
আপডেট : ০২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লুৎফর রহমান হিমেল: ভালোবাসার শক্তির চেয়ে বড় শক্তি আর পৃথিবীতে নেই

লুৎফর রহমান হিমেল: রাত তখন নয়টার মতো হবে। খ্রিষ্টীয় নতুন বছর শুরু হবে কিছুক্ষণ পরই। চারদিকে এরইমধ্যে পটকা ফোটা শুরু হয়েছে। আকাশের দিকে তাকালাম, দেখি কেউ কেউ ফানুসও উড়িয়ে দিয়েছে। গাড়িঘোড়া রাস্তায় কমে গেছে হঠাৎ। কিন্তু তাতে চারদিকে উৎসবের আমেজে ভাটা পড়েনি এতোটুকু। অফিস থেকে ফিরছিলাম। পথে রাজধানীর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি হোটেলে গেলাম রাতের খাবার খেতে। খাবার বলতে নানরুটি পছন্দ আমার। সাথে বুটের ডাল। ২৬- ২৭ বছর বয়েসী হোটেল বয়ের মুখটা আনন্দে চকচক করছে। আমার মতোই দাড়িও রেখেছে সে। দেখলেই কেমন যেন মায়া মায়া লাগে। বললাম, নানরুটি আর বুটের ডাল দাও। প্লেটগুলো সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিও কিন্তু। আমার এমন নির্দেশনায় সে কিছুটা চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল। এরকমটা হয়তো তাকে কেউ বলে না। আমি হেসে বললাম, একটু সতর্ক তো থাকতেই হবে। সে বলল, হ্যাঁ, ঠিকই বলছেন।

ডাল-রুটি খাওয়ার পর বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম একটি চায়ের দোকানে। সারাদিন অফিসে চা খাই। কেন জানি বাইরের চা না খেলে খালি খালি লাগে। অহেতুকই এমন লাগে। ফলে শূন্যতা ঘোচাতে গেলাম এক চায়ের দোকানে।

চল্লিশোর্ধ হবে দোকানদার। কাস্টমার নেই। তাকে সঙ্গ দিচ্ছে এক প্রবীণ। বেঞ্চিতে বসে বললাম, মামা, খুব ভালো করে একটা চা দিবেন। ১ জানুয়ারি নতুন বিশেষ দিন কিন্তু। বলেই বেঞ্চিতে বসতে বসতেই দেখি, চা চামচের দুই চামচ চিনি মিশিয়ে ফেলে সে রীতিমত ঘুঁটা দিচ্ছে। না-না বলতে বলতেই ঘটনাটা ঘটে গেল। বললাম, ‘মামা, আমি শুধু লিকার আর আদা চা খাই।’ শুনেই সে জিভ কাটল। অনেকটা মেয়েরা যেমনটা ভুল হলে পরে করে, সেরকম। তার এই জিভ কাটার ভঙ্গিটা আমার মনে এতোটাই ধরল যে, আমি তাকে রীতিমত সান্তনা দিতে শুরু করলাম, যেন বিরাট বড় একটি ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের দুজনেরই। প্রবীণ আমাদের এই কাণ্ড দেখে কিছুটা বিস্মিত তখন। আমি দোকানদারকে বললাম, ভার্সিটি লাইফে আমি চায়ে দুধ ও চিনি খেতাম দুই-তিন চামচ করে। মানে দুই চামচ দুধ ও দুই-তিন চামচ চিনি। ফলে এ দুটি জিনিসের কোটা আমি শেষ করে ফেলেছি। এখন শুধু লিকার খাই। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা লিমিট আছে বোধ হয়, আমি সেটা অতিক্রম করে এসেছি। চাওয়ালা লোকটি একগাল হাসল। হাসতে হাসতেই নতুন আরেক কাপ চা, মানে লিকার চা বানাতে থাকলো। আমি বললাম, আপনি যদি চিনি চা খান তাহলে ওই চা-টা আপনি খাবেন। পাশের তাকেও এক কাপ দেন। বিল আমি দেবো। এমন কী আর অফার দিয়েছি। চাওয়ালা লোকটি একেবারে মুগ্ধ হয়ে আমাকে বলতে লাগল, না না ভাই। এটা হয় না। দোকান আমার, বিল আমি নেবো না। এটা আপনার জন্যে ফ্রি। লিকার চায়ের আবার বিল কীসের?

আমিও নাছোরবান্দা। মোটামুটি দুইজনের বাহাস লেগে গেল। প্রবীণ লোকটি মুচকি মুচকি হাসছেন। ঝগড়াঝাটি হলে পরে সেটার মিটমাট করা যায়। কিন্তু এমন ভালোবাসার বাহাসে কীইবা বলার থাকে? ফলে তিনি শুধু দেখে চললেন। শেষমেস আমি জোর করে দশটি টাকা, মানে দুই কাপ চায়ের দাম আমিই দিলাম। অনেক কষ্টে তার হাতে গছিয়ে দিতে হলো তা-ও। যতোক্ষণ দোকানটিতে ছিলাম, চাওয়ালা লোকটির মুখে হাসি আর সরল না। পরে দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। কিছুদূর এগিয়ে একবার সাহস সঞ্চয় করে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, দুজনেই আমার চলার পথের দিকে তাকিয়ে আছেন। একজন সামান্য চা-ক্রেতা এককাপ চা খেয়ে চলে যাচ্ছে, সেদিকে দোকানদারের তাকিয়ে থাকবার কথা না। কিন্তু তিনি তাকিয়ে আছেন। তাকিয়ে আছেন তাকে সঙ্গ দেওয়া প্রবীণও। বুঝলাম, ভালোবাসার শক্তির চেয়ে বড় শক্তি আর পৃথিবীতে নেই। হেঁটে চললাম বাসার দিকে। মনটা আজ ভীষণ ভালো লাগায় ভরে আছে। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়