রুহিন হোসেন প্রিন্স: পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য (আমার জন্মও ওই অঞ্চলে) একটি স্বপ্নের সেতু। ওই অঞ্চলের ২১-২৯টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের যে সংকট সেটি সেতু চালু হলেই দূর হয়ে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন যে দুর্ভোগে আছে তার অবসান ঘটবে। দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ ওই অঞ্চলে বাস করে। তারা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে, মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় এই সেতু স্বপ্নের। আরেকটি বড় বিষয় হলো, এই সেতুর নির্মাণ কাজ যে সময় হওয়ার কথা ছিল, নানা জটিলতায় তা হয়নি। বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গেও নানা জটিলত তৈরি হওয়ার পরও পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছি। আলোচনা যেটি দিয়ে শুরু করেছিলাম যে ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিপ্রধান এলাকা। কৃষকের দুর্ভোগ দূর হবে কীভাবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন; এরপরও অঞ্চলগুলো ঘুর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। আমরা জানি, আজ থেকে প্রায় সাত মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলো আম্ফানের আঘাত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক অঞ্চল; এর আগে আইলা, সিডোর ছিল, সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পরিনি। সুন্দরবন রক্ষা করার পরও আমরা ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনও খোঁজ নিলে দেখা যায় কয়রা অঞ্চলসহ সাতক্ষীরার অনেক অঞ্চলে জলাবদ্ধতা আছে এখনও মানুষ ঘরে উঠতে পারেনি । তথ্য বলছে ভবিষ্যতে এটি আরও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। সুতরাং ওই অঞ্চলের উন্নয়ন গতিধারা হবে উপকূলীয় অঞ্চলের বিকল্প উন্নয়ন ধারা ঠিক করা, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি চালু করা এবং একই সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। গত কয়েক দশক থেকে দেখা যায় ওই অঞ্চলের মানুষ শহরে চলে আসছে।
দেশে সুষম উন্নয়ন হলে ওই অঞ্চলের মানুষ ওই এলাকায় থাকবে এবং উন্নয়নধারা ঠিক থাকবে। সুতরাং পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সুযোগ তৈরি হলো। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, ভবিষ্যৎ ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা, পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষা করে বিকল্প উন্নয়ন ধারার কার্যক্রম পরিচালিত হবে কিনা এটি দেখার বিষয়। এখন থেকে যদি আমরা মাস্টারপ্লান করি এবং তার কেন্দ্রবিন্দু যদি ওই অঞ্চলের জনগণকে রাখি, যেকোনও প্রকল্প নেওয়ার আগে জনগণের সম্মতি নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রেখে চ্যালেঞ্জ নেই, তাহলে পদ্মা সেতুর উন্নয়ন ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছাবে।
পরিচিতি : সম্পাদক, সিপিবি
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন