মুনশি জাকির হোসেন: বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ, বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধু; উপর থেকে এলিটদের চাপিয়ে দেওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না, আমরা তৃণমূল থেকে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সমাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই; বাংলাদেশের বিজয় দিবস পালন সেদিনই সত্যিকার অর্থেই অর্থবহ হয়ে উঠবে যেদিন রাষ্ট্রের মালিকানায় আমজনতা, কৃষক, শ্রমিক, প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠিত হবে। যেদিন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি নাগরিকের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে। এটির জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
পুঁজিবাদ, ধনিক শ্রেণি, হুন্ডা, গুন্ডা, ভন্ড, আদর্শহীন রাজনৈতিক পতিতা, কালো টাকা, দুর্নীতিবাজ, সামন্তবাদ, প্রভাবিত তথা কথিত নির্বাচনী কাঠামোর মধ্য দিয়ে আমদানি নির্ভর নাম সর্বস্ব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাওয়ার জন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি, বঙ্গবন্ধুও কখনও বলেননি! স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, প্রবাসী সরকার, এমনকি সদ্য স্বাধীন দেশের সংবিধানেও বলা ছিল বাংলাদেশ কেমন রাষ্ট্র হবে। বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে, সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে, নিসংকোচচিত্তে যার যার ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করবে। শোষণহীন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন স্বাধীন বাংলাদেশের আরেকটি মৌল লক্ষ্য ছিলো! সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার ছিল। ব্রিটিশ শোষণ, পাকিস্তানি শোষণ, সামন্তবাদের আধিপত্য অস্বীকার করে গণপ্রজাতন্ত্র ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।
আমরা শহর থেকে চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাচ্ছি না। আমরা তৃণমূল থেকে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সত্যিকার গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাচ্ছি। গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র স্বয়ংক্রীয়ভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে, নাম সর্বস্ব তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করলে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত প্রায় অসম্ভব। বরং, এই কাঠামোতে লুটেরা প্রতিষ্ঠিত হবে, ব্রিটিশ শোষণ, পাকিস্তানি শোষণ, সামন্তবাদের আধিপত্য কায়েম হবে, বৈষম্য, দুর্নীতি লাগামহীন হবে, সমাজে মাৎসন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে, আবার ভূমিহীন, বস্তিবাসীর সংখ্যা বছর বছর বৃদ্ধি পাবে। এটি অসুস্থ রাষ্ট্র কাঠামোর লক্ষণ। যেখানে রাষ্ট্রের ৯৯ শতাংশ সম্পদ চলে যাবে ১ শতাংশ পুঁজিপতির হাতে।
বাকশাল প্রবর্তিত ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার, দিক নির্দেশনা ছিল। তৃণমূলে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচনী সকল ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল। কৃষক, শ্রমিকদের জন্য রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল, সমবায় ধারণার কথা ছিল। ধনিক শ্রেণির লাগাম টেনে ধরার বিধান ছিল। বাকশাল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ছিলো, বঙ্গবন্ধুই সঠিক ছিলেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা ছিলো না, বঙ্গবন্ধু জানতেন সমস্যা কোথায়, বঙ্গবন্ধু সমাধানের পথও জানতেন। বঙ্গবন্ধু যেটি বিশ্বাস করতেন সেটিই বলতেন। বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, এই বাংলাদেশের ধর্মনিরপক্ষ নীতির পরাজয় হলে এই রাষ্ট্রের পরণতি কী হতে পারে। ফেসবুক থেকে