ভূঁইয়া আশিক : [২] শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী আরও বলেন, ১৫ ডিসেম্বর একাত্তর, বিকাল সাড়ে চারটা বাজে তখন। মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি ক্যাম্পগুলোতে বোমা ফেলছিলো, আমি এবং আমার স্বামী ডা. আলীম চৌধুরী দোতলার বারান্দা থেকে তা দেখছিলাম। তখন আমরা পুরানা পল্টনে থাকতাম। ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে বোমা ফেলতো আর আমরা খুব খুশি হতাম। আলীম চৌধুরীও হো হো করে হাসছিলেন। মিত্রবাহিনী ঘোষণায় বলছিলো, ‘তোমরা (পাকিস্তানিরা) অস্ত্র ফেলে দাও, তোমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পালাবার পথ নেই।’ তা শুনে আলীম চৌধুরী বলছিলেন, ‘বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার, আমরা বিজয় দেখবো। স্বাধীন দেশের নাগরিক হবো’।
[৩] ঠিক ওই সময়ে বাসার নিচে একটা গাড়ির শব্দ শোনা গেলো। উঁকি দিয়ে দেখলাম। আমাদের নিচের তলায় মাওলানা মান্নান থাকতেন (পরে ইনকিলাবের মালিক হয়েছিলেন)। তখন আমার স্বামী বললেন, ‘থাক উঁকি-ঝুঁকি দিও না, ভেতরে চলো এসো।’
গাড়িতে করে আসা লোকজন মাওলানা মান্নানের বাসায় ঢুকলো। ৩০-৩৫ মিনিট পর আমাদের বাসার দরজায় খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে পরিষ্কার বাংলায় বলছিলো, ‘দরজা খুলুন, দরজা খুলুন...।’ তখন জানালার পর্দা খুলে দেখলাম, ৩ জন আলবদর সদস্য। তাদের পোশাক আমরা চিনতাম। নীল শার্ট ও আর ছাই রংয়ের প্যান্ট পরতো তারা। আমি ঘাবড়ে গেলাম। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম, কী করবো? তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। তবে দরজা খুলে দিতে বললেন। বাড়ির কাজের ছেলেকে দরজা খুলে দিতে বললাম আমি। আমার স্বামী তখন দৌড়ে দোতলা থেকে নিচে নামতে চাইলেন। আমি বাধা দিলাম। তিনি বললেন, ‘মান্নান সাহেবের কাছে যাই’। আমি বললাম, কেন? তিনি বললেন, ‘মান্নান সাহেব তো বলেছেন, কোনো ভয় নেই। কোনো অসুবিধা হলে তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।’ তখন আর আমি তাকে থামালাম না। কিন্তু মাওলানা মান্নান কথা রাখেননি। তিনি আসলে মিথ্যা আশ^াস দিয়েছিলেন, আমরা যেন ওই বাসা থেকে অন্যত্র চলে না যাই।
[৪] তারপরই আলীম চৌধুরীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো আলবদর বাহিনী। তাকে মেরেছিলো ১৬ ডিসেম্বর সকালবেলা।