আশরাফ আহমেদ: [২] কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অটোরিকশা-ট্রাক ট্রাক্টর-ড্রাম ট্রাক, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্ণের উচ্চ আওয়াজ , উচ্চস্বরে মাইকিং, নির্মাণকাজে ইট-পাথর ভাঙ্গা, মিছিল-মিটিং’সহ বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক সামগ্রীর শব্দ দূষণে পথচারী, রাস্তার পাশে বসবাসকারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সহ নানান শ্রেণীর মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ।
[৩] উপজেলার পৌর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানবাহনে যত্রতত্র উচ্চস্বরে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাচ্ছে, বিকট আওয়াজে মাইকিং, নির্মাণকাজে ইট-পাথর ভাঙ্গা, মিছিল মিটিং, বাসাবাড়িতে বিয়ে কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্সে উচ্চ আওয়াজে হরহামেশাই শব্দ দূষণ ঘটছে। এমন কি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও উচ্চ আওয়াজ থেকে মুক্ত নয়। যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ অথচ এই আইন মানার ধারেকাছেও নেই কোনো চালক।
[৪] প্রচলিত আইনে উল্লেখ রয়েছে, শব্দ দূষণে দোষী হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য একমাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু ধরনের দণ্ডই প্রদান করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার কথা বলা রয়েছে। অতিমাত্রায় হর্ন বাজানোর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। তাছাড়াও রাস্তার পাশে বসবাসকারী, রিকশা, বাস, মোটরসাইকেল আরোহীসহ পথচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
[৫] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেল। তাছাড়াও ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির করে দিতে পারে। আবার ১০০ ডেসিবেল শব্দের বেশি হলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে যেতে পারে। লম্বা সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান।
[৬] নাক কান গলার রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল হাফিজ বলছেন, অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে দীর্ঘ দিন কাটালে শ্রবণ শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণ শক্তি হারাতে থাকে। কত ডেসিবল শব্দে আপনি কতটুকু সময় কাটাচ্ছেন তার উপর বিষয়টি নির্ভর করে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সাথেই সাথে কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোন ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।
[৭] সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা যায়, হোসেনপুর পৌর এলাকায় দ্বীপেশ্বর গোল চত্বর হয়ে বাইপাস রোডে অসংখ্য বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের যাতায়ত। ওইসব যানবাহনগুলো একজনকে অন্যজনকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে উচ্চস্বরে হর্ণ বাজাচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতাল মোড় ,নতুন বাজার মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় হাজারো শিক্ষার্থী, পথচারী ও বসবাসকারীরা উচ্চ আওয়াজের মধ্য দিয়েই দিনাতিপাত করছেন।
[৮] এ সময় দ্বীপেশ্বর গ্রামের অনেকেই জানান, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াতের সময় বেপরোয়া ট্রাক ট্রাক্টর,ড্র্বাম ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্ণের আওয়াজে, শব্দ দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং প্রায়ই ঘটছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা।
[৯] এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, অতি উচ্চমাত্রার গাড়ির হর্নের আওয়াজ, মাইকিং, মিছিল মিটিং এ উচ্চ মাত্রার শব্দে বধিরতা সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাবে। বিশেষ করে শিশুরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি জানান। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :