হারুন-অর-রশীদ:[২] সময় পরিবর্তনের সাথে আর আধুনিক বাহনের আদলে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। আর সেই সাথে ফরিদপুর থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য “পালকি”।
[৩] বইয়ের পাতায় পালকির কথা আজো উল্লেখ থাকলেও বাস্তবিক সমাজে দেখা মেলেনা পালকির! সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যান্ত্রিক যুগ, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় হারিয়ে গেছে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের পালকির প্রচলন। এক সময় এই পালকিতে চড়েইে নববধু আসতো স্বামীর বাড়িতে। এছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলেও পালকিই ছিলো তাদের একমাত্র বাহন! আজ আধুনিকতা আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। ভুলতে বসেছে সংস্কৃতির নিদর্শনগুলো।
[৪] গ্রামের মেঁঠো পথ ধরে বেঁয়ারারা গানের সুরে পালকি বেয়ে চলেছেন, চার বেহারার পালকি চড়ে, যায়রে কন্যা স্বামীর ঘরে। পালকির ভিতর থেকে নববধু উঁকি মেরে দেখছে, এ যেন এক অপরুপ দৃশ্য। কান্না ভেজা নয়ন তবু জেনো নতুনত্বের এক স্পন্দন। এক সময় এই পালকি ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেতো না,গরীব, ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেরই একটাই বাহন পালকি।
[৫] ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভূপেন হাজারিকার মাদল মাদক তানে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না- “পালকি চলে, পালকি চলে, আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে”। দিনদিন যান্ত্রিক সভ্যতার উৎকর্ষে ফরিদপুর থেকে বিলুপ্ত প্রায় এ পালকি। এখন নানা জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে এ নিদর্শনটি।
[৬] বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো: রেজাউল করিম বলেন, সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আজকাল বিয়ে বাড়িতে পালকির চাহিদা কমে গিয়েছে।
[৭] এতে এ পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ জীবনের তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে পালকির স্থান দখল করে নিয়েছে গাড়ী কিংবা মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকার। তিনি বলেন, বাংলার চিরায়ত এই এতিহ্য ফিরে পেতে বা বর্তমান প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলায় জেলায় এর প্রদর্শন করা যেতে পারে। তাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে এ সম্পর্কে ও উদ্বুদ্ধ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :