মঞ্জুরুল হক: ‘জলে নামবো, জলে নাইব, চুল ভেজাব না’ বললে হবে? এসব বলার দিন শেষ। ‘বল’ আর আপনাদের কোটে নেই। এখন যে ‘ফাউল’ খেলবেন, সে উপায়ও নেই। আপনারা যেদিন ‘অশ্লীলতার অজুহাতে যাত্রাপালা বন্ধ করেছেন, বাউলদের গান-বাজনা বন্ধ করতে দিয়েছেন, কবিগান-পালাগান বন্ধ করিয়েছেন, মারফতি-শরিয়তী বাকযুদ্ধ নিষিদ্ধ করেছেন, লালনের ভাস্কর্য ভাঙতে দিয়েছেন, থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণ করিয়েছেন, সারাদেশে ওয়াহাবী জজবা কায়েম করেছেন, ওয়াহাবীদের দান-খয়রাত নিয়ে শতশত ‘মডেল মসজিদ’ করার ঘোষণা দিয়েছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ধর্মীয় আচার-আচরণ শেখানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, বিভিন্ন বাহিনীতে ক্বেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন, সারা দেশে ইসলামী জীবনধারার নামে ওয়াহাবী ফিরকা চালু করেছেন, সৌদি আরবকে ‘পীর’ ভেবেছেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা মতলববাজদের ওয়াকওভার দিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নিয়োগের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানাতে দিয়েছেন ওলামা লীগকে, পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন করতে দিয়েছেন খুশি মনে, ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হবার জন্য ‘জামায়াত-বিএনপির চেয়ে বেশি ধর্ম পালনকারী’ প্রমাণ করতে গিয়ে মৌলবাদের কাছে কার্যত ‘দাসখত’ দিয়েছেন, সেদিনই ‘চুল’ ভিজে গেছে।
‘নথ’ খুলে গেছে। ‘ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়’-এর মতো বালখিল্য কথাবার্তা ধোপে টিকবে না। সহি ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণের সুযোগ নেই। ‘আরবে আছে, ইরানে আছে, অন্যান্য মুসলিম দেশে আছে’ বলেও লাভ নেই। তারা শিরক করেছে। আইএস যে সকল ভাস্কর্য-মূতি ভেঙে ফেলেছিল তখন কি ওয়াহাবী মুসলিরা প্রতিবাদ করেছিল? করেনি, বরং আইএসকে সমর্থন করেছেন। আধুনিকতার নামে সোস্যাল নেসেসিটিতে ছবি জায়েজ মানে এটা নয় যে ভাস্কর্যও জায়েজ। লালনের মূর্তি, থেমিসের মূর্তি আর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে কোনো পার্থক্য নেই ব্যক্তি পরিচয় ছাড়া। ‘মদিনা সনদ-এ দেশ চলবে’ বলা হলে সেখানে ভাস্কর্য-মূর্তি কোনোটিই জায়েজ নয়। আপনাদের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেছেন ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভাস্কর্য নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধান করবেন’। সেই সুযোগও নেই। হয় তাদের দাবি মেনে নিতে হবে। না হয় তাদের দাবি জানানোর, হুমকি দেওয়ার, আলটিমেটাম দেওয়ার এক্তিয়ার নিষিদ্ধ করতে হবে। পারবেন? মনে হয় না। অনেকটা সময় দিয়ে ফেলেছেন। ফেসবুক থেকে