বিপ্লব পাল: বাংলার রাজনীতির যা অবস্থা-শুধু মমতা ব্যানার্জিই বা বাকী রইলেন কেন? তাকেও বিজেপি নিয়ে নিক। আফটার অল, মমতা ব্যানার্জিকে বাজপেয়ী টাকা জুগিয়েছিলেন তখন। পঞ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ভাঙতে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়। ভাঙাটা দরকার ছিল। কারণ বাংলার মানুষ বামফ্রন্টকে চাইছিলো না আর তরমুজ বাংলা কংগ্রেস ছিল সিপিএমের বি টিম।
সেকুলার বনাম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ন্যারেটিভ ভারতের জনগণ কোনোদিনই খাবে না। কারণ ভারতে কোনো সেকুলার পার্টি নেই। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল ইসলামিক মৌলবাদকে প্রশয় দেয়। বিজেপি হিন্দু মৌলবাদকে। বিজেপি সাম্প্রদায়িক বলে বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে আটকানো যাবে না। বিজেপিকে আটকাতে হলে, তাদের রাজনৈতিক অপদার্থতা, ব্যর্থতার ভিত্তিতেই বাকি দলগুলোকে লড়তে হবে। আর সেটা খুব কঠিন। কারণ বিরোধিদের সেই ক্যালিবারের নেতাই নেই। পদার্থ হলে তবে না অপদার্থকে চেনাতে পারবে।
বাংলায় বিজেপি বনাম তৃণমূলের ফাইট-দুই প্রান্তিক সাবঅলটার্ন গোষ্ঠির ফাইট, যারা দীর্ঘদিন বাম এবং কংগ্রেস শাসনে ক্ষমতার কাছাকাছি ছিল না। দিলীপ ঘোষ মুকুল রায়Ñ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চেয়ে লজ্জা দেবেন না। দিলীপ ঘোষ দুধে সোনা, গোচনায় মারাত্মক সব ওষুধ পান। এগুলোতে এলিটরা হেয় করে। কিন্ত বাস্তব তো এটাই, বাংলা তথা ভারতের সব প্রান্তিক জনগণই এই ধরনের কুসংস্কারচ্ছন্ন। নেহেরু-ইন্দিরা-মনমোহন-জ্যোতিবোস-সিদ্ধার্থশঙ্কর বুদ্ধদেব-এসব অক্সফোর্ড ক্যাম্ব্রিজ প্রেসিডেন্সি এলিটরা ছিলেন ব্রিটিশ কলোনিয়াল হ্যাঙ্গোভার। জনবিচ্ছিন্ন লিবার্যাল এলিট। সুতরাং গণতন্ত্রে এটা হওয়ারই ছিল। একদিন না একদিন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির হাতে ক্ষমতা যেতই। তৃণমূলের রাজত্ব থেকেই তার শুরু। যতোই বাবুরা তৃণমূলের লুম্পেন লুঠেরা রাজনীতিতে ভাষায় আচরণে অসন্তুষ্ঠ হোন-তারাই বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সেটা ১৯৮৫ সাল। মমতা ব্যানার্জি সবে জিতেছেন। সেই প্রথম মমতা ব্যানার্জি নাম শুনেছিলাম সিপিএমের এক শিক্ষক নেতার মুখে। শুনেছিলাম মানে তিনি বলছিলেন, বস্তির মেয়ে, মুখের কি ভাষা-ঠিক যেন কালিঘাটের বেশ্যা। ঠিক যেমন এখন শুনছেন দিলীপকে নিয়ে -খরগপুরের মস্তান। সিপিএমের এলিট বাবু শ্রেণির চিন্তাধারা এখনো সেই স্তরেই আছে। তারা কখনোই ভেবে দেখে না, তাদের চলছে না চলবে না, স্কুলের চাকরি দাও এর রাজনীতি সম্পূর্ণভাবেই জনবিচ্ছিন্ন।
একটা ব্যাপার ভুললে চলবে না, মমতা ব্যানার্জি দিলীপ ঘোষ শুভেন্দু অধিকারীরা মাটিতে পা দিয়ে চলেন, জনগণের পালস বোঝেন। তৃণমূলে থাকলে একটু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেন। বিজেপির মূল সমস্যা আইডিওলজি না। পার্টিটা দিল্লি থেকে চলে। কংগ্রেস যেমন দিল্লি থেকে বাংলা চালাতে পারেনি, ওটা বিজেপির পক্ষেও খুব বেশি দিন সম্ভব হবে না। লজিস্টিক সমস্যা আছে।
শুভেন্দু কি করবেন তিনিই জানেন। বিজেপিতে যোগ দিলে ভুল করবেন। কারণ তিনি নিজে পার্টি তৈরি করলে, আজ না হলে কাল, বাংলার আঞ্চলিক রাজনৈতিক পার্টির নেতৃত্ব তার কাছে আসতো। মমতা তো বিরাট ভুল করলেনই। তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে শুভেন্দুকে তুলে আনলে, আজ এই দিন দেখতে হতো না।
এখন যেটা দাঁড়াবে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে, বিজেপি ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসবে। এবার বিজেপি যদি শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী করে-তাহলে তৃণমূল শেষ হয়ে খুব সম্ভবত নতুন ধরনের বাংলাজোট উঠে আসবে। মনে রাখবেন, সিপিএম ৫০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ এ নামতে সময় লেগেছে৭ বছর। ক্ষমতায় না থাকলে তৃণমূলের ক্ষেত্রে ২-৩ বছর হতে পারে। কারণ তৃণমূলের আদি কর্মীরা সব বসে গেছে। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পার্টি বাড়ানোর পরিকল্পনা সিপিএমকে শেষ করেছে পশ্চিমবঙ্গে। মমতা ভুল থেকে শিক্ষা নেননি।
শুভেন্দুকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী না করলে, শুভেন্দুকে নিজের দল বানাতেই হবে। তার হাতেও আলটারনেটিভ নেই। বেসিক্যালি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেছে, পাত্তা পাচ্ছে না-লিস্টটা বেশ লম্বা। এরা মিলে একটা পার্টি খুলতেই পারে। কিন্ত তৃণমূল না হারা পর্যন্ত তা হবে না।
মুশকিল হচ্ছে ফান্ডিং। তৃণমূল বিজেপি ক্ষমতায়। তাই এদের পেছনে টাকা ঢালার লোক আছে। তৃণমূল হারলে তবেই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা আলাদাভাবে ফান্ডিং পাবে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন দাবার অ্যান্ড গেমের জাস্ট একটু আগে। ঘোড়া আগেই গেছে। এবার নৌকাও গেলো। রানী এখন একা। উলটো দিকে ঘোরা নৌকা গজ সেনা সব আছে, কিন্তু রানী নেই। ক্যান বি এনিবডিস গেম-রাইট? ফেসবুক থেকে