ডেস্ক রিপোর্ট : বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে কারাগারে কয়েদির পোশাক পরা মিন্নির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, একটি কক্ষে কয়েদির সাদা শাড়ি পরে বেঞ্চের উপর বসে আছেন মিন্নি। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে কয়েদির পোশাক পরা মিন্নির ছবিটি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছে। জনমনে প্রশ্ন উঠছে শেষ পর্যন্ত মিন্নির ফাঁসি হবে কি? কেউ দাবি করেছেন তার ফাঁসি হবে না কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন স্বাধীনতার পর থেকে শতাধিক নারীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন কারা ভোগ করার পর বেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ মারা গেছে, কারো কারো আপিলে শাস্তি কমেছে। ২০০৭ সালে কাশিমপুরে একমাত্র মহিলা কারাগার উদ্বোধন করা হয়। দেশের প্রতিটি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ থাকলেও সেখানে কোনো ফাঁসির মঞ্চ নেই। নিয়মানুযায়ী ফাঁসির আসামিরা সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা না করলে ফাঁসি থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। তবে আজ পর্যন্ত কোনো নারীর আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে, এমন খবরও শোনা যায়নি। সুতরাং শেষ পর্যন্ত হয়তো মিন্নি রাস্ট্রপতির ক্ষমা ফাঁসি থেকে রেহাই পেতে পারে। আর অন্যদিকে একদল বলছেন মিন্নির ফাঁসি হবে কারণ হিসেবে তারা বলছেন মিন্নির ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় অনালোচিত ও উপেক্ষায় থাকা ‘ফিমেল ক্রিমিনালিটি’ তত্ত্বের একটি প্রায়োগিক উদাহরণ সৃষ্টি হলো।
আমাদের ঔপনিবেশিক আইনব্যবস্থা নারীকে ‘অপরাধী’র তুলনায় ‘ভিক্টিম’ হিসেবে দেখতে এবং দেখাতে অভ্যস্ত। ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা ভিক্টিম’- এই সত্য স্বীকার করেও কোন কোন নারী যে পুরুষের সমান এমনকি পুরুষের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধী হতে পারে- এই সম্পূরক বাস্তবতাটির আইনগত স্বীকৃতিও প্রয়োগ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারী ব্যতীত অন্যান্য সকল সুস্থ ও সবল নারী অপরাধীকে স্রেফ জেন্ডারের ভিত্তিতে নির্বিচারে ‘অবলা’ বিবেচনা করা, আইন প্রণয়ন, বিচারিক কার্যক্রম কিংবা দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করা বাংলাদেশে ‘ফিমেল ক্রিমিনালিটি’র ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে অস্বীকার বুঝায় এবং এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
রিফাত হত্যা মামলার এই রায় ‘ফিমেল ক্রিমিনালিটি’র পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ, বিচার ও দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে ‘লিঙ্গ নিরপেক্ষতা’ বা জেন্ডার নিউট্রালিটি-র প্রশ্নকে একাডেমিক ডিসকোর্সে নিশ্চয় এখন থেকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
আপনার মতামত লিখুন :