জাকির তালুকদার: অভিজাত হুমায়ুন কবীর তারাশংকর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- ও তো একটা গেঁয়ো। ধনী অভিজাত সুধীন দত্ত তো আধাবেকার জীবনানন্দকে কবি বলেই স্বীকার করতেন না। ‘পরিচয়’ পত্রিকায় একটিমাত্র কবিতা ছেপেছিলেন। সেটাও বিষ্ণু দে-র সম্মানরক্ষার্থে। কারণ ‘পরিচয়’-এ ছাপার জন্য জীবনানন্দের কাছ থেকে কবিতাটি চেয়ে এনেছিলেন বিষ্ণু দে। বুদ্ধদেব বসু তখন কলকাতায় অবস্থান তৈরির জন্য যুদ্ধ করছেন। সুধীন দত্তের ‘পরিচয়’-এর আসরে যেতেন। কিন্তু সমাদর পাননি। নিজেকে অপাংক্তেয় মনে হতো। যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অভিজাত ধনী শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বেকার দরিদ্র মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটি পর্যন্ত সঠিকভাবে লেখেননি। তিনি তাচ্ছিল্য করে লিখেছিলেন, মাণিকলাল। বুদ্ধদেব বসু কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হবার পর নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্তের সিঁড়িতে পা দেবার পরে দরিদ্র ভবঘুরে হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলামকে ছোট করতে গিয়ে বললেন, নজরুল পরিপক্ক হতে পারেন নি। প্রতিভাবান বালকই রয়ে গেছেন। আর সৈয়দ মুজতবা আলী কাবুলের এক নামগোত্রহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অনেক ভাষা জানেন বটে, কিন্তু কলকাতায় তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নেই। লেখার সম্মানী দিয়ে কোনোমতে খেয়ে-পরে দিন গুজরান করেন। বুদ্ধদেব ফতোয়া দিলেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা মানে স্রেফ অহেতুক চিৎকার।
সেইসব ফতোয়াবাজ মূলত টিকে আছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে। মানিক, তারাশংকর, জীবনানন্দ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী সজীব পাঠকের পাঠ-টেবিলে। তবে ফতোয়াবাজরা এখনো তৈরি হয়। তারা এখনো অনভিজাত মেধাবী লেখকদের অস্বীকার করেন মূলত শ্রেণীবিদ্বেষ থেকে। যদিও বাংলাদেশে অভিজাত লেখক কেউ নেই। সবাই বড়জোর এক বা দুই পুরুষের ধনী। সেই ধন কোনো সুস্থ পন্থায় অর্জিত নয়। আর শিক্ষার ঐতিহ্য প্রায় কারো পরিবারেরই নাই। তবু তারা ফতোয়াবাজি চালিয়ে যান। ফেসবুক থেকে