হেলাল মহিউদ্দীন: বার্মায় ‘মৃত্যুর রেলরাস্তা’ বা ‘ডেথ রেলওয়ে’ নিয়ে জাপানি নৃশংসতার বিশ্বাসযোগ্য চিত্রায়ন আছে ডেভিড লিন পরিচালিত ‘দ্য ব্রিজ অন দ্যা রিভার কোওয়াই’ (১৯৫৭) ছবিটিতে। জাপান বার্মার স্থানীয় অধিবাসী এবং অবিভক্ত ভারতবর্ষ হতে কাজের সন্ধানে যাওয়াদের মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার বেসামরিক মানুষকে এবং ৬১ হাজার যুদ্ধবন্দীকে জোরপূর্বক দাসশ্রমে বাধ্য করেছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, ১৯৪২ সালে, বার্মার দখল নেয় জাপানিরা। দখল নিয়েই থাইল্যান্ডের বান পং থেকে বার্মার থানবুজায়াত পর্যন্ত ৪১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ তৈরি শুরু করে। জাপানিদের জন্য রেলপথটির বিকল্প ছিলো না। কারণ বার্মা ছিলো ঘন জঙ্গল এবং জটিল স্থল ও জলপথের দেশ। যুদ্ধের রসদপত্র ও সৈন্যদের জন্য খাবারদাবার সরবরাহ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সহজে ঢুকতে পারার জন্য রেলপথটি তৈরি হয়েছিলো। মাত্র ১ বছরে ১৯৪৩ সালের ১৭ অক্টোবরে রেলপথটি নির্মাণ শেষ হয়। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে গিয়ে জাপান নিষ্ঠুরতার সীমা-পরিসীমা রাখেনি।
১৭ অক্টোবর। মৃত্যুর রেলরাস্তা সমাপ্ত হবার আনন্দে উদ্বেল জাপানি সৈন্যরা, এই দিন সুরার নহর ও নারীসম্ভোগের উৎসবে মেতেছিলো। চেয়ে চেয়ে দেখছিলো ক্ষুধার্ত, অপুষ্ট হাড্ডি-কংকালসার জীবন্ত লাশ ৯০ হাজার বেসামরিক রেল-শ্রমদাস এবং ২০ হাজার যুদ্ধবন্দী। কিন্তু জাপানের শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত ১১১জন সেনা অফিসারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলো। ৩১ জনের ফাঁসিও হয়েছিলো।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক আচরণ তৎকালীন জাপানি দখলদারদের কাছ থেকে শেখা। চীনা সামরিক সরঞ্জাম সহায়তানির্ভর হলেও সমরবিদ্যায় মিয়ানমার এখনো জাপানকেই গুরু মেনে রেখেছে। চীনকে কব্জায় রেখেই সম্প্রতি নতুন গুরু বানাচ্ছে ভারতকে। ভারতীয় অস্ত্র কিনছে। ভারতেরই নিজের সাবমেরিন সংকট। তবু মিয়ানমারকে দিয়েছে আইএনএস সিন্ধুবীর নামের সাবমেরিন। ভাবছিলাম এই সাবমেরিনের ব্যবহার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহারের তো সুযোগই নেই। কারণও নেই। ঠিক একই ভাবনা দেখলাম অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ফেসবুক পোস্টে। তিনিও প্রশ্ন রেখেছেন ‘কোন দেশের বিরুদ্ধে এটা ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি’? এদিকে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ১৯৩টি দেশের গোপন ভোটে জিতে গেছে মিয়ানমারের পরম বন্ধু রাশিয়া ও চীন। হেরেছে সৌদি আরব। মনে করা হয় যে গাম্বিয়াকে দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর খরচ-খর্চাগুলো সৌদি আরবই ওআইসির মাধ্যমে যোগান দিয়েছিলো। এখন?
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বদলে যতোভাবে সম্ভব বাংলাদেশকে যুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে। মাস দুয়েক আগে মিয়নামারের একটি মিলিটারি হেলিকপ্টার বাংলাদেশের সীমানার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে মিয়ানমার উগ্র অকূটনৈতিক ভাষায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে ও হুমকি দেয়। এখন ভারতীয় সাবমেরিন কেনা আরেকটি বড় উস্কানি এবং আরও বড় ধমক নয় কী? বাংলাদেশের প্রস্তুতির কী অবস্থা? শুধুই ঘরের মানুষদের কথা বলা দমন করার পেছনে সর্বশক্তি ব্যয় করলে চলবে। আল্লাহ না করুক মিয়ানমার যদি একতরফা যুদ্ধমুদ্ধ শুরু করে, তখন। বন্ধুরাষ্ট্র তো সাহায্যের হাত বাড়াবে বলে মনে হয় না। সে রকমটি করলে কী জাপানি মানের মিলিটারি শক্তির মিয়ানমারের কাছে সাবমেরিন বেঁচতো? ফেসবুক থেকে