সাদ্দাম হোসেন: [২] দুই দিন পেরিয়ে গেলেও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের আরিফা ও তার দুই শিশু সন্তানের মৃত্যুর রহস্যের জট খোলেনি। তবে, আরিফার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আঁখির স্কুলের নোট বুক থেকে দুই পাতার একটি চিরকুট উদ্ধার করে আইনশৃংখলা বাহিনী। সেই সূত্র ধরেই এগুচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা।
[৩] রানীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে হাতের লেখাটি আরিফার। এতে আরিফা লিখেছেন, “আমার স্বামীর দেনমোহর মাফ করে দিলাম। সংসারের বকাঝকা, অশান্তির চেয়ে চলে যাওয়া ভালো, তাই চলে গেলাম। আমার ছেলে-মেয়ে মায়ের জন্য কেন হাহাকার করবে? কাঁদবে কেন-তাই ওদেরও নিয়ে গেলাম”।
[৪] ঘর থেকে ১৫ হাত দুরে একটি ডোবায় কীভাবে তিনজনের মরদেহ এলো-এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে স্থানীয়দের মাঝে।
[৫] আরিফা ও তার দুই শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুর কুল-কিনারা খুঁজতে তার স্বামী আকবর আলী, দেবর বাবর আলী, শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম , শ্বাশুড়ী মনোয়ারা বেগম ও ননদ ইয়াসমিনকে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় থানা হেফাজতে নেওয়া হয় তাদের। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাবুল ইসলামের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে ঘটনার রহস্য উন্মোচনে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামাল আহম্মেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি অনুসন্ধানী টীম কাজ করছে।
[৬] আরিফার মা রুমালী বেগম বলেন, মেয়েটি আমার কোনো দিন মুখ ফুটে বলেনি, স্বামীর সংসারে কেমন ছিল। না বলেই সে চলে গেলো।
[৭] স্বামী আকবর আলী বলেন, ঋণের কথা শুনলে আরিফা অস্থির হয়ে উঠতো। ঘটনার দিন রাতে সে আমাকে এক গ্লাস দুধ খেতে দেয়। তা খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। ফজরের নামাজের সময় বাবা’র ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠি। দেখি আমার স্ত্রী আরিফা পাশে নেই। এরপর তাকে খুঁজতে শ্বশুরবাড়ি যাই। সেখানেও দেখি নাই। বাড়ি এসে দেখি ঘরের পাশে ডোবায় স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ ভাসছে।
[৮] ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর একই গ্রামের আকবর আলীর সঙ্গে আরিফার বিয়ে হয় ১১ বছর আগে। তখন থেকেই সংসারে অভাব লেগেই ছিলো। দিনমুজুরী আর ফেরি করে সংসার চলতো আকবরের। এর ঘটনার দুই দিন আগে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে একটি এনজিও থেকে ১২ হাজার টাকা ঋণ নেয় আকবর। বাবাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ৫-৬ হাজার টাকা ধারদেনা রয়েছে তার।
[৯] রানীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, শুক্রবার মৃত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
[১০] গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের একটি পুকুর থেকে আরিফা বেগম (৩২), তার মেয়ে আখলিমা আখতার আঁখি (১০) ও ছেলে আরাফত হোসেনের (৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সম্পাদনা: হ্যাপি