পটুয়াখালী প্রতিনিধি : [২] নামের মিলে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে সসম্মানে মুক্তি দিয়েছে পটুয়াখালীর আদালত। পাশাপাশি একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে হেনস্থা করার জন্য যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
[৩] রোববার দুপুর ১২ টায় পটুয়াখালীর প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আবুল বাসার মিয়ার আদালতে ৮0 বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের মুক্তি চেয়ে তার পক্ষে অ্যাডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হোসেন তপন হাবিবুর রহমানের সাথে সংঘঠিত অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে বিকাল সোয়া চারটায় এ রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ বিচারক আবুল বাসার মিয়া।
[৪] রায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি নাহার গার্মেন্টস এর মালিক হাবিবুর রহমানকে জেলখানায় প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গলাচিপা থানার এএসআই আলামিনকে ওই থানা থেকে ক্লোজড করে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে আনা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার ওসি মোঃ মনির হোসেন।
[৫] ব্র্যাকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় গলাচিপা পৌর এলাকার মুজিবনগর রোডের সাজাপ্রাপ্ত মো. হাবিবুর রহমানের স্থলে পৌর এলাকার কলেজপাড়ার বনানি এলাকার ৮০ বছরের নিরপরাধ বৃদ্ধকে জেলে পাঠায় পুলিশ। নিরপরাধ বৃদ্ধকে মুক্তির বিষয় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহায়তা করে।
[৬] হাবিবুর রহমানের আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন তপন বলেন, পুলিশের ভুলের কারণে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে সাতদিন বিনা দোষে সাজা খাটতে হয়েছে। এতে তার সম্মানহানি ও ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে হাবিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয়।
[৭] স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক হাবিবুর রহমান, বাবা নূর মোহাম্মাদ মাস্টার, মুজিবনগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন।
[৮] এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নং ২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ব্যাংকে জমা দেয়। এতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার করা হয়। পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়।
[৯] কিন্তু তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ গ্রহণ করেননি মর্মে ২০১৩ সালের ১৯ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে জানান। এ অবস্থায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়।
[১০] ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ ওই মামলার রায় দেন পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
[১১] রায়ের দিন হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই পরোয়ানা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর গলাচিপা থানা পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন গলাচিপার বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জানা যায় নামের মিল থাকায় নিরপরাধ হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
[১২] হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী কোনো দিন ব্যবসা করেননি। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিইনি। আমাদের দুই ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। আমাদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে টাকা দেয়। তা দিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী চলি। পুলিশকে বিষয়টি বলেছি, কিন্তু শোনেনি।
[১৩] পটুয়াখালী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে গলাচিপার প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই আল-আমিনকে থানা থেকে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিরপরাধ বৃদ্ধকে গ্রেফতার করায় দুঃখপ্রকাশ করছি আমরা। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :